রাজধানী ঢাকায় চার সদস্যের একটি পরিবারে শুধু খাবারের পেছনে ব্যয় করতে হয় ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। আর মাছ-মাংস বাদ দিলে খাবার খরচ দাঁড়ায় ৭ হাজার ১৩১ টাকা, যা একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরির তুলনায় বেশি। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাজেট প্রস্তাববিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। মাছ, মাংস, চাল, ডাল, তেল, মরিচ, হলুদ, আদা, রসুনসহ ১৭টি নিত্যপণ্যের প্রতিদিনের বাজারদর এবং একজন মানুষ গড়ে কী পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে, এর ওপর ভিত্তি করে এই হিসাব করা হয়েছে। সিপিডি বলছে, একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে মোট আয়ের ৬০ শতাংশ খাবারের পেছনে খরচ করতে হয়।
গতকাল সোমবার সিপিডির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা বিষয়কে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সিপিডি কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। বক্তব্য দেন গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, খাদ্যতালিকা থেকে মাছ-মাংস কম্প্রোমাইজ করে (বাদ দিয়ে) হিসাব করলে ঢাকায় চারজনের পরিবারে খাদ্যের পেছনে ব্যয় হবে ৭ হাজার ১৩১ টাকা। ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, সেখানে মাছ-মাংস যুক্ত হলে ব্যয় তিন গুণ বেড়ে ২২ হাজার ৬৬৪ টাকায় দাঁড়াবে। একজন শ্রমিকের মিনিমাম আয় এর চেয়ে অনেক কম। সিপিডি আরও বলেছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা শহরের চারজনের এক পরিবারে প্রতি মাসে খাবার কিনতে খরচ হয়েছিল ১৮ হাজার ১১৫ টাকা। মাছ-মাংস না খেলে সেই খরচ ছিল ৫ হাজার ৬৮৮ টাকা।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসরকারি খাতে ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা উচিত। পারলে এই ঈদেই বেতন-ভাতা বাড়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। তাই সব খাতের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো উচিত।
প্রসঙ্গত, কয়েক মাস ধরেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপকহারে বেড়েছে। চাল, ডাল, তেলের পাশাপাশি মাছ-মাংস, ডিমের দামও বেশ চড়া। রাজধানীর বর্তমান বাজারদর হিসাবে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। গরুর মাংসের দাম কেজিপ্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। আর এলাকাভেদে ১ ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকায়। মাছ-মাংসের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের খাবারের পাত থেকে মাছ-মাংস উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
বাজারের অব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাজার প্রক্রিয়া ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। বাজারে কোনো ধরনের মেকানিজম কাজ করছে না। বাজারের ভেতর ছোটদের প্রভাব ও অংশগ্রহণ ক্রমেই সীমিত হচ্ছে। বড়দের প্রভাব-প্রতিপত্তি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাড়ছে। যার কারণে বাজারের মনিটরিং দিন দিন দুর্বল হচ্ছে। কার্যত মনিটরিংয়ের কোনো প্রভাব বাজারে পড়ছে না বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
ড. ফাহমিদা খাতুনে আরও বলেন গরুর মাংস, চিনি, সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক বেশি। সব সময় যে বিশ্ববাজারকে দোষারোপ করব সেটি নয়। কর কিছুটা কমিয়ে এনে স্বস্তি দেওয়া যেতে পারে। বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে। যে কোনো সংকট হলে তার সুযোগ নিয়ে বাজারে যে সীমিত সংখ্যক আমদানিকারক, যার এক একটি পণ্য আমদানি করে, তারাই সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করে।