ঢাকা ১০:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাজেট বাড়ে, মশাও বাড়ে!

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:২৭:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ এপ্রিল ২০২৩
  • ১৬৮৯ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবছর বাজেট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজধানীতে বাড়ছে মশার উপদ্রব। দুই সিটি ভাগ হওয়ার পর মশার বাজেট বেড়েছে ৪ গুণেরও বেশি। যার পরিমাণ হাজার কোটি টাকা। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটির নেই তেমন সফলতা। আগে মশা মারতে কামান দাগানোর কথা শোনা গেলেও এখন যেনো মশাই কামান নিয়ে সিটি কর্পোরেশনকে তাড়া করছে। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, প্রয়োগকারীদের অদক্ষতার কারণেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মশা।

মশার দাপটে নগরবাসী কতটা অসহায় তা দেখতে আমরা গিয়েছিলাম রাজধানীর সাগুফতা হাউজিংয়ে। এলাকাবাসীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে সেখানের মশার ভয়াবহতা। সন্ধ্যার দিকে সেই ভয়াবহতা বেড়ে যায় আরও কয়েক গুণ, যা দেখার জন্য আমরা এই হাউজিং এ অপেক্ষা করবো রাত পর্যন্ত।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘এতো পরিমাণ মশা যে, দাঁড়ানোই যায় না। মুখের মধ্যে মশা ঢুকে যায়!’

আরেকজন বলেন, দিনে বেলায় যেমন-তেমন, সন্ধ্যার পর থেকে প্রচুর পরিমাণে মশা বেড়ে যায়। বৃষ্টি নামলে প্রকোপ বেশি হয়ে যায়।

প্রায় দেড় কোটি মানুষের এই নগরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের জন্য ১০৫ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর সিটির বরাদ্দ ৭৬ কোটি টাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির বরাদ্দ ২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ঢাকা সিটি বিভক্তের পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটিতে এই বাজেটের পরিমাণ ছিলো ১২ কোটি এবং ঢাকা দক্ষিণে এই পরিমাণ ছিলো ২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সেই হিসেবে দুই সিটি ভাগ হওয়ার পর থেকে মশার বাজেট বেড়েছে ৪ গুণেরও বেশি। তারপরও মশা না কমায় উদ্বিগ্ন রাজধানীবাসী।

এক পথচারী বলেন, মশার উৎপাত আগের থেকে অনেক বেড়েছে। এই অবস্থায় আমরা সত্যিই খুব আতঙ্কিত।

নগরী হিসেবে যাত্রা শুরুর পর থেকেই ঢাকায় মশক নিয়ন্ত্রণ বা পরিচ্ছন্নতার কাজ চলমান রয়েছে। ১৮৬৪ সালের পহেলা আগস্ট গঠিত হয় ঢাকা পৌরসভা। ১৯৭৮ সালে তা সিটি করপোরেশনে পরিবর্তিত হয়। এরপর নগর সম্প্রসারণের সঙ্গে তাল মেলাতে ২০১১ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ হয়ে যায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুই সিটিতে। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে মশক নিধন কাজে মোট ব্যয় ছিলো ৩২১ কোটি টাকা। আর বিভক্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত মশক নিধন কাজে মোট ব্যয় করেছে হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে এই দীর্ঘ সময়ে মশক নিয়ন্ত্রণে ঢাকার নেই তেমন কোনো সফলতা। বরং গত ২৭টি অর্থবছরে মশক নিধন কাজে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৩শ’ কোটি টাকা।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, কীটনাশক প্রয়োগে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করা এবং প্রয়োগকারীদের অদক্ষতার কারণেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মশা। ফলে মশক নিধনে প্রতি বছর বিপুল অর্থ খরচ করলেও সেটি কাজে আসছে না।

কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন,  আমরা গত ২০-৩০ বছরে কী কারণে পারলাম না? আমাদের এখানে মশা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় সঠিক পদ্ধতি কখনোই মানা হয়নি। এখানে যে প্রথাগত ফগিং এবং লার্ভিসাইডিং করা হচ্ছে, এটার জন্য দরকার মনিটরিং।

তবে কীটতত্ত্ববিদদের সঙ্গে একমত নন ঢাকার দুই মেয়র। মশা নিয়ন্ত্রণে আছে দাবি করে জানালেন নতুন উদ্যোগের কথা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কন্ট্রোলরুম খুলেছি। ৫৪টি ওয়ার্ডে ৫৪ জন সুপারভাইজার বিষয়টা মনিটর করবে। এবং পর্যায়ক্রমে সিটির সকল মশক কর্মীকে বডিক্যাম দিয়ে দেবো। প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধানে আসতে হবে। প্রযুক্তি এবং টেকনিক্যাল সমাধান যদি আমরা একসঙ্গে নিয়ে আসতে পারি তাহলে আশা করছি, মশা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবো।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা মানসম্পন্ন কীটনাশক নিশ্চিত করছি। সেটার ফলও আমরা পাচ্ছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে মশক পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

নগরপিতারা মশক নিধনের নানা উদ্যোগের কথা জানালেও দেশে প্রতিদিনই মশার কামড়ে আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন। একইসঙ্গে গতবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৬২ হাজার ৩৮২ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বাজেট বাড়ে, মশাও বাড়ে!

আপডেট সময় : ১০:২৭:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ এপ্রিল ২০২৩

প্রতিবছর বাজেট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজধানীতে বাড়ছে মশার উপদ্রব। দুই সিটি ভাগ হওয়ার পর মশার বাজেট বেড়েছে ৪ গুণেরও বেশি। যার পরিমাণ হাজার কোটি টাকা। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটির নেই তেমন সফলতা। আগে মশা মারতে কামান দাগানোর কথা শোনা গেলেও এখন যেনো মশাই কামান নিয়ে সিটি কর্পোরেশনকে তাড়া করছে। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, প্রয়োগকারীদের অদক্ষতার কারণেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মশা।

মশার দাপটে নগরবাসী কতটা অসহায় তা দেখতে আমরা গিয়েছিলাম রাজধানীর সাগুফতা হাউজিংয়ে। এলাকাবাসীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে সেখানের মশার ভয়াবহতা। সন্ধ্যার দিকে সেই ভয়াবহতা বেড়ে যায় আরও কয়েক গুণ, যা দেখার জন্য আমরা এই হাউজিং এ অপেক্ষা করবো রাত পর্যন্ত।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘এতো পরিমাণ মশা যে, দাঁড়ানোই যায় না। মুখের মধ্যে মশা ঢুকে যায়!’

আরেকজন বলেন, দিনে বেলায় যেমন-তেমন, সন্ধ্যার পর থেকে প্রচুর পরিমাণে মশা বেড়ে যায়। বৃষ্টি নামলে প্রকোপ বেশি হয়ে যায়।

প্রায় দেড় কোটি মানুষের এই নগরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের জন্য ১০৫ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর সিটির বরাদ্দ ৭৬ কোটি টাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির বরাদ্দ ২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ঢাকা সিটি বিভক্তের পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটিতে এই বাজেটের পরিমাণ ছিলো ১২ কোটি এবং ঢাকা দক্ষিণে এই পরিমাণ ছিলো ২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সেই হিসেবে দুই সিটি ভাগ হওয়ার পর থেকে মশার বাজেট বেড়েছে ৪ গুণেরও বেশি। তারপরও মশা না কমায় উদ্বিগ্ন রাজধানীবাসী।

এক পথচারী বলেন, মশার উৎপাত আগের থেকে অনেক বেড়েছে। এই অবস্থায় আমরা সত্যিই খুব আতঙ্কিত।

নগরী হিসেবে যাত্রা শুরুর পর থেকেই ঢাকায় মশক নিয়ন্ত্রণ বা পরিচ্ছন্নতার কাজ চলমান রয়েছে। ১৮৬৪ সালের পহেলা আগস্ট গঠিত হয় ঢাকা পৌরসভা। ১৯৭৮ সালে তা সিটি করপোরেশনে পরিবর্তিত হয়। এরপর নগর সম্প্রসারণের সঙ্গে তাল মেলাতে ২০১১ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ হয়ে যায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুই সিটিতে। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে মশক নিধন কাজে মোট ব্যয় ছিলো ৩২১ কোটি টাকা। আর বিভক্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত মশক নিধন কাজে মোট ব্যয় করেছে হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে এই দীর্ঘ সময়ে মশক নিয়ন্ত্রণে ঢাকার নেই তেমন কোনো সফলতা। বরং গত ২৭টি অর্থবছরে মশক নিধন কাজে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৩শ’ কোটি টাকা।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, কীটনাশক প্রয়োগে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করা এবং প্রয়োগকারীদের অদক্ষতার কারণেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মশা। ফলে মশক নিধনে প্রতি বছর বিপুল অর্থ খরচ করলেও সেটি কাজে আসছে না।

কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন,  আমরা গত ২০-৩০ বছরে কী কারণে পারলাম না? আমাদের এখানে মশা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় সঠিক পদ্ধতি কখনোই মানা হয়নি। এখানে যে প্রথাগত ফগিং এবং লার্ভিসাইডিং করা হচ্ছে, এটার জন্য দরকার মনিটরিং।

তবে কীটতত্ত্ববিদদের সঙ্গে একমত নন ঢাকার দুই মেয়র। মশা নিয়ন্ত্রণে আছে দাবি করে জানালেন নতুন উদ্যোগের কথা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কন্ট্রোলরুম খুলেছি। ৫৪টি ওয়ার্ডে ৫৪ জন সুপারভাইজার বিষয়টা মনিটর করবে। এবং পর্যায়ক্রমে সিটির সকল মশক কর্মীকে বডিক্যাম দিয়ে দেবো। প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধানে আসতে হবে। প্রযুক্তি এবং টেকনিক্যাল সমাধান যদি আমরা একসঙ্গে নিয়ে আসতে পারি তাহলে আশা করছি, মশা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবো।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা মানসম্পন্ন কীটনাশক নিশ্চিত করছি। সেটার ফলও আমরা পাচ্ছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে মশক পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

নগরপিতারা মশক নিধনের নানা উদ্যোগের কথা জানালেও দেশে প্রতিদিনই মশার কামড়ে আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন। একইসঙ্গে গতবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৬২ হাজার ৩৮২ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।