পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, নেই শিক্ষার্থীও। অবকাঠামো নেই; তবুও চলছে বিশ্ববিদ্যালয়। রাজনৈতিক বলয় আর বাণিজ্যিক মানসিকতা থেকে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা এসব বিশ্ববিদ্যালয় চলছে কোচিং সেন্টারের আদলে।
মাত্র তিন দশকের কিছু বেশি সময় আগে গবেষণা নির্ভর শিক্ষাপ্রক্রিয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হলেও এসব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ যেন সনদ বিক্রির বৈধ প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে! অদক্ষ শিক্ষক, মনগড়া টিউশন ফি, নামমাত্র গবেষণা, লোক দেখানো বাণিজ্যিক ওয়ার্কশপ-সেমিনার, নিয়ম বহির্ভূত সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ আর উন্নয়নের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় বিদেশ ভ্রমণ যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। শিক্ষক সংকট, গবেষণায় অনীহা আর নানা অব্যবস্থাপনায় মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রায় ২০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমানে দেশে সরকার অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৮টি এর মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৯৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম চলমান রয়েছে। অপরদিকে, মোটা অঙ্কের বিনিময়ে সনদ বিক্রি এবং নানা অনিয়মের অভিযোগে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের। এছাড়া অনুমোদন থাকলেও দীর্ঘদিন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে না পারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন ছয়টি।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০টিতে নেই উপাচার্য, প্রায় ৭৫টি বিশ্ববিদ্যালয় চলছে উপ-উপাচার্য ছাড়া এবং ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শূন্য রয়েছে কোষাধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ। তবুও বছর বছর যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। এ যেন কোচিং সেন্টারের আদলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কারখানা!
কেন এমন দশা? শিক্ষাবিদরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পাঁচ দশকের অক্ষমতা, মনিটরিংয়ের অভাব, বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোক্তাদের বাণিজ্যিক মানসিকতা, উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে জনবল নিয়োগ না দেওয়া, পর্যাপ্ত শিক্ষক সংকট, মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়া, মনগড়া নিয়মে উচ্চ টিউশন ফি আদায়, শিক্ষক নিয়োগে নানা অনিয়মে দেশের বেসরকারি উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এমন সংকট দেখা দিয়েছে।
ইউজিসির ক্ষমতায়ন, মনিটরিং বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকারের নিবিড় সম্পৃক্ততা ও অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গতিশীল করতে না পারলে এ সংকট আরও বাড়বে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
তাদের মতে, দেশে মাত্র ১৫ থেকে ২০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করছে। বাকিগুলোর শিক্ষার মান খারাপ। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে। কেউ কেউ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পৈত্রিক বাগান বাড়িতে রূপ দিয়েছেন। এ সমস্যা থেকে বের হতে নামসর্বস্ব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সতর্কতা এবং নির্দেশনা না মানলে বন্ধ করে দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন- ২০১০ অনুযায়ী অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের মানদণ্ড ঠিক রাখতে পারছে না। এসব বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ শিক্ষায় তেমন কোনো অবদান রাখতে পারবে না বলেও মত তাদের।
ইউজিসির এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৫৪ হাজারের কিছু বেশি। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৯৫টি। ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় বেড়ে হয় ১০৮টি। শিক্ষার্থী কমে দাঁড়ায় তিন লাখ ১০ হাজারে। অপরদিকে, শিক্ষকও কমেছে। ২০১৭ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ২০। ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৩৯৩ জনে।
ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের ১০৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় জোড়াতালি দিয়ে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো-
ফরিদপুরের টাইমস ইউনিভার্সিটি
১০ বছর আগে যাত্রা শুরু করা ফরিদপুরের টাইমস ইউনিভার্সিটি চলছে মাত্র ১৫ জন শিক্ষক দিয়ে। নিজস্ব জমির ওপর ক্যাম্পাস স্থাপনের নিয়ম থাকলেও ২৮ হাজার বর্গফুটের ভাড়া বাসাতে বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে। ৪০০ আসনের অনুমোদন থাকলেও মাত্র ১৭১ শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বার্ষিক নিজস্ব আয় প্রায় ৬০ লাখ টাকা দেখালেও বিদেশি/অন্যান্য উৎস হতে আয় রয়েছে আরও ৫৯ লাখ টাকা।
সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি
৩০ বছর আগে যাত্রা শুরু করা রাজধানীর সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি চলছে মাত্র ৩৮ জন শিক্ষক নিয়ে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি বিভাগের বিপরীতে তিন হাজার আসনের অনুমোদন থাকলেও শিক্ষার্থী আছেন মাত্র ৯৩ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ গবেষণা হলেও ৩০ বছরের এ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা খাতে এক টাকাও বরাদ্দ নেই!
নেই দেশি-বিদেশি সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রবন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়টির বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৩৯৬ লাখ টাকা। বিদেশি ও অন্যান্য উৎস থেকে আয়ও রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি
রাজধানীর রাজারবাগে ২০ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয়। মাত্র ২৩ জন শিক্ষক নিয়ে তাদের শিক্ষাকার্যক্রম চলছে। চারটি অনুষদ, পাঁচটি বিভাগ এবং ১১টি অনুমোদিত প্রোগ্রামের বিপরীতে এক হাজার ৫০০ আসন থাকলেও মাত্র ৩৬৪ শিক্ষার্থী রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব বার্ষিক আয় ১১৮ লাখ টাকা।
ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
২০ বছর আগে রাজধানীর পান্থপথে যাত্রা শুরু করা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি চলছে মাত্র ৩০ জন শিক্ষক নিয়ে। তাদের মধ্য মাত্র তিনজন রয়েছেন অধ্যাপক পদমর্যাদার। অনুমোদিত তিনটি অনুষদ এবং ছয়টি বিভাগের বিপরীতে পাঁচ হাজার ৪০০ আসন থাকলেও শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ২১৮ জন। বার্ষিক ১১৯ লাখ টাকা আয় দেখালেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো গবেষণা প্রকল্প। দেশি-বিদেশি সাময়িকীতেও প্রকাশিত হয়নি কোনো প্রবন্ধ।
এনপিআই ইউনিভার্সিটি
আট বছর আগে মানিকগঞ্জে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টি চলছে মাত্র ২৭ জন শিক্ষক দিয়ে। তাদের মধ্যে পাঁচজন চুক্তিভিত্তিক। মাত্র ২০ কাঠা ভাড়া জমিতে তিনটি অনুষদ ও পাঁচটি বিভাগের বিপরীতে এক হাজার ২০০ আসন থাকলেও শিক্ষার্থী রয়েছে এক হাজার ২৪ জন। বিশ্ববিদ্যালয়টির বার্ষিক ২১৫ লাখ টাকা নিজস্ব আয় দেখালেও নেই কোনো গবেষণা প্রকল্প।
রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়
২০১৬ সালে ভাড়া বাসাতে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টি চলছে মাত্র ২১ জন শিক্ষক দিয়ে। পাঁচজন খণ্ডকালীন শিক্ষক থাকলেও এমফিল সমমানের শিক্ষক মাত্র একজন। সাত বছর আগের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অনুষদ ও পাঁচটি বিভাগের বিপরীতে শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ৩৯ জন। বিশ্ববিদ্যালয়টির বার্ষিক আয় নয় লাখ টাকা দেখানো হলেও বিদেশি বা অন্যান্য উৎস থেকে ২৬৭ লাখ টাকা আয় রয়েছে। সাত বছর আগের এ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিও গবেষণা খাতে এক টাকা ব্যয় করেনি।
জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস
পাঁচ বছর আগে রাজধানীর গুলশানে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চারটি অনুষদ ও পাঁচটি বিভাগের বিপরীতে শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ১২ জন। অপরদিকে শিক্ষক রয়েছেন ৩০ জন। পাঁচ বছর আগে যাত্রা শুরু করা এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়নে এক টাকাও খরচ করেনি।
ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া
চার বছর আগে যাত্রা শুরু করা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি অনুষদের বিপরীতে ৫৮০টি আসন থাকলেও মাত্র ১৮ জন শিক্ষক ও ৯৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি বার্ষিক ৩৯ লাখ এবং বিভিন্ন উৎস হতে ৮৬ লাখ টাকা আয় দেখালেও গবেষণা খাতে এক টাকাও বরাদ্দ দেয়নি। নেই দেশি-বিদেশি সাময়িকীতে একটি প্রবন্ধও।
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
২২ বছর আগের বিশ্ববিদ্যালয়টি চলছে মাত্র ৩১ জন শিক্ষক নিয়ে। চারটি অনুষদ, পাঁচটি বিভাগ ও ১৫টি প্রোগ্রামের বিপরীতে ৪৪০ আসন থাকলেও শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ২৫৭ জন। বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণা খাতে এক টাকাও বরাদ্দ দেয়নি।
ইউনিভার্সিটি অব স্কিল এনরিচমেন্ট এন্ড টেকনোলজি
চার বছর আগে যাত্রা শুরু করা এ বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র ১৩ জন শিক্ষক নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তিনটি অনুষদ ও চারটি বিভাগের অনুমোদন পেলেও ৩৪০ আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ২৫ জন।
ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি
পাঁচ বছর আগে বরিশালে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টি মাত্র ১৬ জন পূর্ণকালীন শিক্ষক ও পাঁচজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। ৩২ হাজার বর্গফুটের ভাড়া বাসার এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি বিভাগের অনুমোদন ও ৪৬০ আসন থাকলেও শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ১৬৮ জন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নেই কোনো গবেষণা কার্যক্রম।
বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়
মাত্র ১৪ জন পূর্ণকালীন ও ১২ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়ে চলছে ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করা এ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে তিনটি অনুষদের বিপরীতে ৬০০ আসনের অনুমতি থাকলেও শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ১৮৯ জন। বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণায় এক টাকাও বরাদ্দ রাখেনি।
আরটিএম আল-কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি
নিজস্ব অবকাঠামো না থাকলেও মাত্র ২৫ জন শিক্ষক ও ৪২ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়ে চলছে এ বিশ্ববিদ্যালয়।
ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
২০১২ সালে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টি মাত্র ২০ জন শিক্ষক নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চারটি অনুষদ ও ছয়টি বিভাগের বিপরীতে ১১৪০ আসন থাকলেও শিক্ষার্থী রয়েছে ৮৮৫ জন। ১১ বছর পার করলেও এ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই কোনো গবেষণা প্রকল্প। দেশি-বিদেশি সাময়িকীতেও প্রকাশিত হয়নি কোনো প্রবন্ধ।
ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
১১ বছর আগে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টি চলছে মাত্র ২৭ জন শিক্ষক দিয়ে। পাঁচ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক থাকলেও এমফিল পদমর্যাদার কোনো শিক্ষক নেই। এখানে ছয়টি বিভাগের বিপরীতে ৮৬৫ আসন থাকলেও শিক্ষার্থী আছেন ৫৫৪ জন। এ বিশ্ববিদ্যালয়েও নেই কোনো গবেষণা প্রকল্প।
এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
২০১২ সালে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টি ৪৬ জন শিক্ষক নিয়েই চলছে সকল কার্যক্রম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪১০ আসন থাকলেও বর্তমানে শিক্ষার্থী আছেন ৫৮৩ জন। গবেষণা খাতে বরাদ্দ না থাকলেও বার্ষিক ৩৪৬ লাখ এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৩৫৭ লাখ টাকা আয় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির।
রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়
মাত্র ৩৬ জন শিক্ষক নিয়ে চলছে ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করা এ বিশ্ববিদ্যালয়। অধ্যাপক পদমর্যাদার রয়েছেন মাত্র তিনজন। ছয়টি বিভাগে ১২১০ আসন থাকলেও শিক্ষার্থী মাত্র ৬৯১ জন। বিশ্ববিদ্যালয়টি এক টাকাও গবেষণায় বরাদ্দ রাখেনি।
রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা
২০ বছর আগে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মাত্র ৩৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। ১৩ হাজার বর্গফুটের ভাড়া বাসায় তিনটি অনুষদ ও সাতটি বিভাগের কার্যক্রম চলছে। গবেষণায় এক টাকাও বরাদ্দ দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।
আনোয়ার খান মডার্ন ইউনিভার্সিটি
২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ২৬ জন শিক্ষক রয়েছেন তাদের নিয়েই চলছে সকল শিক্ষাকার্যক্রম। ৩১ হাজার বর্গফুটের ভাড়া বাসায় দুটি অনুষদ ও পাঁচটি বিভাগে মোট ৫০০ আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থী আছেন ৮৪০ জন। রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় এক টাকাও বরাদ্দ দেয়নি।
সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি
২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টি চলছে মাত্র ৪০ জন শিক্ষক নিয়ে তাদের মধ্যে নয়জন আবার খণ্ডকালীন শিক্ষক। দুটি অনুষদ ও তিনটি বিভাগের বিপরীতে ৩০০ আসনের অনুমোদন থাকলেও শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৭১ জন। নিজস্ব ও বিদেশি আয় থাকলেও গবেষণা খাতে এক টাকাও বরাদ্দ দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।
দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমন বেহাল দশা নিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও গণসাক্ষরতা অভিযানের সহ-সভাপতি মনজুর আহমেদ বলেন, ‘এটা উচ্চ শিক্ষার বড় ধরনের দুরবস্থা। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন আছে। সেখানে বলা আছে কী কী নিয়মনীতি মানতে হবে। কীভাবে এগুলো পরিচালিত হবে তাও বলা আছে। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আমাদের মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি কী দায়িত্ব পালন করছে- সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।’
তিনি বলেন, ‘এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের সিদ্ধান্ত যেন অনেকটা রাজনৈতিক ভাবেই হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে, সকল প্রক্রিয়া ঠিক রেখেই অনুমোদন দেওয়া উচিত। পাশাপাশি এগুলো কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। অনুমোদন দেওয়ার আগে যাচাই-বাছাই করতে গেলেই তো বোঝা যায় তারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নাকি আসলেই শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে। এখানেই আমাদের চরম ব্যর্থতা। এটি উচ্চ শিক্ষার প্রধান সংকটও।’
দেশের প্রবীণ এ শিক্ষাবিদ বলেন, ‘শুধু বেসরকারি ভাবেই নয়; সরকারি ভাবেও নতুন নতুন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। সেখানে যথাযথ মান রক্ষা করে কাজ করা হচ্ছে না। এটা জাতির জন্য ভয়ানক সিদ্ধান্ত। যাদের দায়িত্ব পালন করার কথা তারাই দায়িত্ব পালন করছেন না। ফলে এ সংকট আরও প্রকট হচ্ছে।’