ঢাকা ০৩:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেয়র আরিফুলের সিটি নির্বাচন না করার ঘোষণা

  • প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৭:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ মে ২০২৩
  • ১৬৫৮ বার পড়া হয়েছে

আসন্ন ২১ জুন অনুষ্ঠিতব্য সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। দীর্ঘ প্রায় দুই মাস প্রার্থী হবেন কি না তা ঝুলিয়ে রেখে অবশেষে আজ স্পষ্ট ঘোষণা দিলেন। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে অনেক নাটকীয়তা ও জল্পনা-কল্পনার অবসান হলো।

আজ শনিবার বিকেলে নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে তিনি নিজে এক সমাবেশের আহ্বান করেন। পূর্ব নির্ধারিত এই জনসভায় মেয়র আরিফ তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন এমনই কথা ছিল।

জনসভায় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে বিএনপির রাজনীতি শুরু করি। আমার জীবন থাকতে এই দলের ক্ষতি হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। অনেকেই আমাকে উকিল আব্দুস সাত্তার বানানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমি সেই সুযোগ কাউকে দিতে চাই না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করার পরিবেশ নেই। বিশেষ করে ইভিএম নিয়ে নগরের মানুষজন জানে না। এটি ভোট কারচুপির মহাআয়োজন। অতীতে আপনারা আমার পাশে ছিলেন। আমি কারাগারে থাকা অবস্থায় আপনারা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। আমি সেসব কথা ভুলতে পারি না।

আরিফ বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমার দল বিএনপি অংশ নেবে না। আমি এই সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম। এ সময় আরিফ নগরবাসীকে ভোট বর্জন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি আপনাদের সন্তান, আমি আপনাদের ভাই। আমি মেয়র না থাকলেও আপনাদের পাশে সব সময় থাকব। আমাকে আপনারা ক্ষমা করুন।

এর  আগে তিনি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিজ বাসা কুমারপাড়া থেকে পায়ে হেঁটে হজরত শাহজালাল (র.) মাজারের পৌঁছান। পরে মাজার জেয়ারত শেষে নেতাকর্মীদের নিয়ে রেজিস্ট্রারি মাঠে এসে মঞ্চে ওঠেন। এ সময় রেজিস্ট্রারি মাঠে দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যায়। সমাবেশ উপলক্ষে রেজিস্ট্রারি মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয় নেতাকর্মীদের পদচারণায়।

প্রসঙ্গত, বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও গত প্রায় দুমাস ধরে আরিফ তার প্রার্থিতার বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখেন। ফলে সিটি নির্বাচন ঘিরে তাকে নিয়ে যে জল্পনা-কল্পনার ছিল তার অবসান তিনি নিজেই করলেন।

এ ছাড়া গত কয়েক দিন ধরে মেয়র আরিফ প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন ও দলের সিদ্ধান্তের কথা ভেবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে আসছিলেন। যদিও গত শুক্রবার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দপুর জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদের উদ্দেশে তার দেওয়া বক্তব্যে মেয়র আরিফ নতুন করে সিলেটবাসীর পাশে থাকার কথা বলেন। আরিফ বলেন, ‘আমি সব সময় সিলেটের জনগণের পাশে ছিলাম এবং আছি। যে অবস্থানই থাকি না কেন, প্রিয় সিলেটের জনগণের পাশেই থাকব।’

এর আগে গত ১৭ এপ্রিল যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিষয়ে সংকেত রয়েছে এবং তা দু-চার দিনের মধ্যে জানাবেন বলে জানিয়েছিলেন আরিফুল হক। যুক্তরাজ্যে সফরকালে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে ওই সংকেত পান। সংকেতটি রেড, না গ্রিন; অর্থাৎ নির্বাচন করবেন কি না, তার ব্যাখ্যা দিতে এক মাস সময় চেয়ে নেন। ফলে আজ দুপুরে রেজিস্ট্রারি মাঠের নাগরিক সমাবেশে আরিফুল কী ঘোষণা দেন, তারই প্রতীক্ষা করছিলেন প্রার্থী, ভোটার ও সাধারণ মানুষ।

আরিফুল হক চৌধুরী ১০ বছর মেয়র থাকাকালে নানাভাবে অলোচনায় এসেছেন। বিরোধীদলের মেয়র হওয়া সত্ত্বেও তিনি সিলেট ১ আসনের সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্য প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল কালাম আবদুল মোমেনের আনুকূল্য পেয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তিনি বিতর্কিতও হয়েছেন। অবশেষে সিসিক নির্বাচনে আবার প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে তার জনপ্রতিনিধিত্বের আপতত অবসান হলো।

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মেয়র আরিফুলের সিটি নির্বাচন না করার ঘোষণা

আপডেট সময় : ০৭:৩৭:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ মে ২০২৩

আসন্ন ২১ জুন অনুষ্ঠিতব্য সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। দীর্ঘ প্রায় দুই মাস প্রার্থী হবেন কি না তা ঝুলিয়ে রেখে অবশেষে আজ স্পষ্ট ঘোষণা দিলেন। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে অনেক নাটকীয়তা ও জল্পনা-কল্পনার অবসান হলো।

আজ শনিবার বিকেলে নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে তিনি নিজে এক সমাবেশের আহ্বান করেন। পূর্ব নির্ধারিত এই জনসভায় মেয়র আরিফ তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন এমনই কথা ছিল।

জনসভায় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে বিএনপির রাজনীতি শুরু করি। আমার জীবন থাকতে এই দলের ক্ষতি হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। অনেকেই আমাকে উকিল আব্দুস সাত্তার বানানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমি সেই সুযোগ কাউকে দিতে চাই না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করার পরিবেশ নেই। বিশেষ করে ইভিএম নিয়ে নগরের মানুষজন জানে না। এটি ভোট কারচুপির মহাআয়োজন। অতীতে আপনারা আমার পাশে ছিলেন। আমি কারাগারে থাকা অবস্থায় আপনারা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। আমি সেসব কথা ভুলতে পারি না।

আরিফ বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমার দল বিএনপি অংশ নেবে না। আমি এই সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম। এ সময় আরিফ নগরবাসীকে ভোট বর্জন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি আপনাদের সন্তান, আমি আপনাদের ভাই। আমি মেয়র না থাকলেও আপনাদের পাশে সব সময় থাকব। আমাকে আপনারা ক্ষমা করুন।

এর  আগে তিনি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিজ বাসা কুমারপাড়া থেকে পায়ে হেঁটে হজরত শাহজালাল (র.) মাজারের পৌঁছান। পরে মাজার জেয়ারত শেষে নেতাকর্মীদের নিয়ে রেজিস্ট্রারি মাঠে এসে মঞ্চে ওঠেন। এ সময় রেজিস্ট্রারি মাঠে দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যায়। সমাবেশ উপলক্ষে রেজিস্ট্রারি মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয় নেতাকর্মীদের পদচারণায়।

প্রসঙ্গত, বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও গত প্রায় দুমাস ধরে আরিফ তার প্রার্থিতার বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখেন। ফলে সিটি নির্বাচন ঘিরে তাকে নিয়ে যে জল্পনা-কল্পনার ছিল তার অবসান তিনি নিজেই করলেন।

এ ছাড়া গত কয়েক দিন ধরে মেয়র আরিফ প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন ও দলের সিদ্ধান্তের কথা ভেবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে আসছিলেন। যদিও গত শুক্রবার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দপুর জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদের উদ্দেশে তার দেওয়া বক্তব্যে মেয়র আরিফ নতুন করে সিলেটবাসীর পাশে থাকার কথা বলেন। আরিফ বলেন, ‘আমি সব সময় সিলেটের জনগণের পাশে ছিলাম এবং আছি। যে অবস্থানই থাকি না কেন, প্রিয় সিলেটের জনগণের পাশেই থাকব।’

এর আগে গত ১৭ এপ্রিল যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিষয়ে সংকেত রয়েছে এবং তা দু-চার দিনের মধ্যে জানাবেন বলে জানিয়েছিলেন আরিফুল হক। যুক্তরাজ্যে সফরকালে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে ওই সংকেত পান। সংকেতটি রেড, না গ্রিন; অর্থাৎ নির্বাচন করবেন কি না, তার ব্যাখ্যা দিতে এক মাস সময় চেয়ে নেন। ফলে আজ দুপুরে রেজিস্ট্রারি মাঠের নাগরিক সমাবেশে আরিফুল কী ঘোষণা দেন, তারই প্রতীক্ষা করছিলেন প্রার্থী, ভোটার ও সাধারণ মানুষ।

আরিফুল হক চৌধুরী ১০ বছর মেয়র থাকাকালে নানাভাবে অলোচনায় এসেছেন। বিরোধীদলের মেয়র হওয়া সত্ত্বেও তিনি সিলেট ১ আসনের সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্য প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল কালাম আবদুল মোমেনের আনুকূল্য পেয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তিনি বিতর্কিতও হয়েছেন। অবশেষে সিসিক নির্বাচনে আবার প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে তার জনপ্রতিনিধিত্বের আপতত অবসান হলো।