জাল নোট নিয়ে লিচু কিনতে গিয়ে দোকানিদের হাতে ধরা পড়েন একজন। তাকে পুলিশে দিলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এক ব্যাংক কর্মকর্তার সহায়তায় গড়ে তোলা হয়েছে জাল টাকার কারখানা। সেখানে নিয়মিত ছাপিয়ে সুযোগ বুঝে ছড়িয়ে দেওয়া হতো বাজারে। পরে ঢাকার অদূরে সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নে একটি পোশাক কারখানার ভেতর এই জাল টাকার কারখানার সন্ধান পায় পুলিশ। গতকাল বুধবার সেখানে অভিযান চালিয়ে আরও দুজনকে আটক করা হয়। উদ্ধার করা হয় ৫০ লাখ ১৭ হাজার টাকা মূল্যমানের জাল নোট, বিপুল পরিমাণ জাল টাকা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম।
সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের সাধাপুরের পুরানবাড়ি এলাকার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে সাখাওয়াত হোসেন খানের মালিকানাধীন ‘সাউথ বেঙ্গল এপারেলস’ নামে একটি পোশাক কারখানায় এই জাল টাকার কারখানা করা হয়।
পুলিশের অভিযানে আটকরা হলো বরিশালের মুলাদী থানার ডিগ্রীরচর খান বাড়ির জয়নাল আবেদীন খানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন খান (৫০), একই উপজেলার বয়াতিকান্দি গ্রামের মানিক মোল্লার ছেলে নাজমুল হোসেন (২৪) ও শরীয়তপুর জেলার পালং থানার গয়াধর গ্রামের আল ইসলাম সরদারের ছেলে সুজন মিয়া (৩০)।
এ ব্যাপারে কারখানার পাশের বাড়ির মালিক ইব্রাহীম জানান, দীর্ঘদিন থেকে এই এলাকায় পোশাক কারখানাটি পরিচালনা করছেন সাখাওয়াত হোসেন খান নামের ওই ব্যক্তি। করোনাকালে গার্মেন্ট ব্যবসায় ক্ষতির শিকার হলে কারখানাটির পাশের একটি জমিতে গরুর ফার্মের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। কিছুদিন পর সেটিও বাদ দিয়ে কারখানার ভেতর টুকটাক পোশাক তৈরির কাজ হচ্ছিল বলে জানতাম। কিন্তু তিনি যে পোশাক কারখানার আড়ালে ভেতরে জাল টাকা তৈরি করতেন, সেটি আমাদের কল্পনাতেও ছিল না। আজ সকালে পুলিশের অভিযানের ফলে বিষয়টি জানতে পারলাম। এদিকে অভিযুক্ত সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, দীর্ঘদিন আগে তিনি এখানে পোশাক কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেন। করোনার সময় তার বেশকিছু অর্ডার বায়াররা বাতিল করে দিলে তিনি বেকায়দায় পড়েন। ৫-৭ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণের বোঝায় পড়েন। চার মাস আগে সাইফুল নামে এক সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা এবং আহসান উল্লাহ মণ্ডল ও নুরুনবী নামে আরও দুজন তাকে এই জাল টাকা বানানোর জন্য প্রস্তাব দেয়। তারাই তাকে এই জাল টাকা প্রস্তুতির সব সরঞ্জামও সরবরাহ করত।
অভিযান শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গতকাল সকালে সাভারের অন্ধ মার্কেটের সামনে থেকে জাল টাকা দিয়ে লিচু কিনতে গেলে দোকানদারসহ স্থানীয়রা জাল নোট শনাক্ত করে ও একজনকে আটক করে সাভার থানায় খবর দেয়। খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ আটক ব্যক্তিকে নিয়ে সাভারের বনগাঁওয়ের সাধাপুর পুরানবাড়ি এলাকায় ওই কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ৫০ লাখ ১৭ হাজার নকল টাকা ও প্রিন্ট অবস্থায় আরও বিপুল পরিমাণ জাল টাকার সন্ধান পায়। পরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে কারখানার সব জাল টাকা উদ্ধার করে ও তিনজনকে আটক করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, পোশাক কারখানার ভেতরে সাবেক এক ব্যাংক কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের সহায়তায় জাল নোট তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে গরুর হাটে এই জাল নোট ব্যবহার করে বিপুল অর্থের মালিক হওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। তাদের আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর) আব্দুল্লাহিল কাফী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম, সাভার মডেল থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা ও বনগাঁও ইউনিয়নের ভবানীপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোখলেসুর রহমানসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য। আটককদের বিরুদ্ধে, সাভার মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।