ফ্রোজেন শোল্ডার কাঁধের এমন একটা রোগ, যাতে ব্যথার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং একসময় তা অসহনীয় হয়ে পড়ে। কাঁধের নড়াচড়াও অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। সাধারণত মধ্যবয়সীদের এ রোগ বেশি দেখা যায়।
কেন হয়
এ রোগের সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে কিছু রোগের সঙ্গে ফ্রোজেন শোল্ডারের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ডায়াবেটিস, শরীরে অতিরিক্ত মেদ বা ওবেসিটি, হাইপার থাইরয়েড, হৃদরোগ ও প্যারালাইসিস রোগীদের মধ্যে ফ্রোজেন শোল্ডারের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। কাঁধের অস্থিসন্ধির পর্দার ভেতরে ও বাইরের দিকে দুটি আবরণ থাকে। এ দুই আবরণের মধ্যে কিছুটা ফাঁকা জায়গা থাকে, যেখানে এক ধরনের তরল পিচ্ছিল পদার্থ থাকে, যা কাঁধের মসৃণ নড়াচড়ার জন্য জরুরি। এ রোগ হলে ওই দুই পর্দার মাঝখানের স্থান ও পিচ্ছিল পদার্থগুলো কমে যায়। এতে কাঁধের নড়াচড়া সহজভাবে করা যায় না। ফলে প্রচুর ব্যথার সৃষ্টি করে, যা দিন দিন বাড়তে থাকে ও অসহনীয় হয়ে পড়ে।
লক্ষণ
ঘুমাতে গেলে বা একপাশ হয়ে শুতে গেলে কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। প্রথম দিকে ব্যথা অল্প হলেও তা ক্রমান্বয়ে বাড়ে। বিশেষ করে কোনো জিনিস হাতে ওঠাতে গেলে বা কাঁধ ঘুরিয়ে পিঠ চুলকাতে গেলে ব্যথা অনুভূত হয় বেশি। ধীরে ধীরে রোগীর কাঁধের নড়াচড়া, বিশেষ করে হাত ওপরের দিকে ওঠানো এবং হাত ঘুরিয়ে পিঠ চুলকানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে হাত ঝিঁঝি করা, শক্তি কম পাওয়া, এমনকি পাশাপাশি হাত একদম ওঠাতে না পারার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এমন কোনো লক্ষণ দেখা দিলে খুব দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে, রোগটি ফ্রোজেন শোল্ডার কি না।
চিকিৎসা
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফ্রোজেন শোল্ডার ভালো হতে থাকে। কিছুটা সময় লাগলেও কোনোরকম অপারেশন ছাড়াই সঠিক ও বিশেষ কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে এ রোগ ভালো হয়ে যায়। ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন রোগে ভুগলে এবং চিকিৎসা নিতে বিলম্ব হলে তখন ব্যায়ামের পাশাপাশি স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়ার প্রয়োজন হয়। তবে নিয়মিত ব্যায়ামই এ রোগের একমাত্র নিরাপদ চিকিৎসা। কেননা জয়েন্টের ক্যাপসুল ও পেশিগুলো জমে যায় বলে যত বেশি নাড়ানো হবে, তত বেশি উপকার পাওয়া যাবে। এসব ব্যায়াম রোগী ঘরেই করতে পারেন। চিকিৎসক রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যায়ামগুলো শিখিয়ে দেবেন।
রোগ প্রতিরোধে
বয়স ৪০ বা তার ঊর্ধ্ব বয়সীরা এ সমস্যার জন্য ঝুঁকিতে থাকেন। যেসব কারণে শোল্ডারের মুভমেন্ট কমে যায়, যেমন—রোটেটর কাফ ইনজুরি, হাত ভেঙে যাওয়া, স্ট্রোকের কারণে এবং অপারেশনজনিত কারণে দীর্ঘদিন শোল্ডারের মুভমেন্ট কমে যাওয়া। একটু সতর্ক থাকলেই এ সমস্যা থেকে নিজেদের রক্ষা করে চলা যায়। আঘাতজনিত সমস্যা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। অত্যধিক ভারী জিনিস তোলার কারণে মাংসপেশি ও লিগামেন্টস ইনজুরি হতে পারে। এসব কাজের সময় যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। শিশুদের হাত ধরে ওঠানোর সময় জোরে টান লাগলে শোল্ডারে ইনজুরি হতে পারে। শিশুদের সাবধানে কোলে নিতে হবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, রোগ হওয়ার আগে থেকেই সব বয়সীর নিয়মিত শোল্ডার বা কাঁধের ব্যায়াম করা।
তথ্যসূত্র :
ডা. তাহমিনা করিম অ্যানি
মেডিকেল অফিসার, স্কয়ার হসপিটাল, ঢাকা