ঢাকা ০২:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজউক কর্মচারীর ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার প্রতারনা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৪:০৩:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩
  • ১৬৬৫ বার পড়া হয়েছে

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জরিপ সাথি (চেইনম্যান) পদে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী দেবাশীষ কুমার সাহা। কম দামে রাজউকের প্লট পাইয়ে দেওয়ার ফাঁদে ফেলে এক নারীর কাছ থেকে প্রায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাকে রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ডিবির উপকমিশনার ইকবাল হোসাইন বলেন, ওই নারী প্লট বুঝে না পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে দেবাশীষ তা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন।

একপর্যায়ে দেবাশীষ ভুক্তভোগী নারীকে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় বাসায় এসে মারধর করেন এবং গলাটিপে হত্যার চেষ্টা চালান। দেবাশীষ তাঁর তলপেটে লাথিও মেরেছিলেন। তখন তিনি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে অবশেষে রামপুরা থানায় প্রতারণার মামলা করেন।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম সূত্র জানায়, প্রাথমিক তদন্ত অনুসারে দেবাশীষ চাকরির সুযোগে রাজউকে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকেন। তিনি পরিকল্পনা করে নারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতেন। এক নারীর বাবা-মা অসুস্থ থাকার সময় তাঁদের জমিজমা ও সম্পত্তি-সংক্রান্ত বিষয়ে নারী রাজউকে যেতেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে দেবাশীষের পরিচয় হয়। দেবাশীষ তাঁর সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। পরে ওই নারীর বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে দেবাশীষ ভুক্তভোগী নারীকে রাজধানীর ঝিলমিল ও পূর্বাচলে প্লট পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

প্রলোভনে পড়ে নারী দুটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ১৫০ ভরি স্বর্ণ বিক্রির ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, একটি প্লট বিক্রির ২ কোটি ১০ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র বিক্রির ৫০ লাখ টাকা, প্রাইভেট কার বিক্রি করে ১০ লাখ, ওই নারীর পরিচিত এক বন্ধুকে প্লট দেওয়ার জন্য এক কোটি ৫০ লাখ, মন্দিরের প্লট তাঁকে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য ৫০ লাখ এবং ঝিলমিল প্রকল্পের একটি প্লট তাঁর নামে লিখে দেওয়ার জন্য মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকাসহ মোট ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা দেবাশীষকে দেন।

দেবাশীষ ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের নভেম্বরের মধ্যে ওই নারীর কাছ থেকে এই টাকা নেন। তবে তিনি তাঁকে কোনো প্লট বুঝিয়ে দেননি। দেবাশীষ রাজউকে আসা বিত্তশালী ও অভিভাবক নেই, এমন নারীদের নিশানা করে তাঁদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক করতেন। তাঁদের সম্পত্তির নানা তথ্য সংগ্রহ করতেন ও বাসায় যেতেন। পরে রাজউকের নানা স্থানে কম দামে প্লট দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় কৌশলে বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ করতেন।

পরে প্রতারিত ব্যক্তি টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি, আইনজীবী, সাংবাদিক ও ছাত্রলীগ নেতাদের নাম ব্যবহার করে হুমকি দিতেন। দেবাশীষ ক্যাসিনোয় জুয়া খেলতেন। এ জন্য তিনি কিছুদিন আগে নেপালে যান। সেখান থেকে দেশে ফেরার পথে তাঁর কাছে অনেক ডলার থাকায় নেপালের বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন। সেখানে ২৩ দিন জেল খেটে তিনি দেশে আসেন।

রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, রাজউকের জরিপসাথি দেবাশীষ কুমার সাহার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এতে রাজউকের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হইয়েছে বিধায় তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রাজউক কর্তৃপক্ষ।

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজউক কর্মচারীর ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার প্রতারনা

আপডেট সময় : ০৪:০৩:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জরিপ সাথি (চেইনম্যান) পদে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী দেবাশীষ কুমার সাহা। কম দামে রাজউকের প্লট পাইয়ে দেওয়ার ফাঁদে ফেলে এক নারীর কাছ থেকে প্রায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাকে রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ডিবির উপকমিশনার ইকবাল হোসাইন বলেন, ওই নারী প্লট বুঝে না পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে দেবাশীষ তা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন।

একপর্যায়ে দেবাশীষ ভুক্তভোগী নারীকে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় বাসায় এসে মারধর করেন এবং গলাটিপে হত্যার চেষ্টা চালান। দেবাশীষ তাঁর তলপেটে লাথিও মেরেছিলেন। তখন তিনি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে অবশেষে রামপুরা থানায় প্রতারণার মামলা করেন।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম সূত্র জানায়, প্রাথমিক তদন্ত অনুসারে দেবাশীষ চাকরির সুযোগে রাজউকে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকেন। তিনি পরিকল্পনা করে নারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতেন। এক নারীর বাবা-মা অসুস্থ থাকার সময় তাঁদের জমিজমা ও সম্পত্তি-সংক্রান্ত বিষয়ে নারী রাজউকে যেতেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে দেবাশীষের পরিচয় হয়। দেবাশীষ তাঁর সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। পরে ওই নারীর বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে দেবাশীষ ভুক্তভোগী নারীকে রাজধানীর ঝিলমিল ও পূর্বাচলে প্লট পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

প্রলোভনে পড়ে নারী দুটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ১৫০ ভরি স্বর্ণ বিক্রির ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, একটি প্লট বিক্রির ২ কোটি ১০ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র বিক্রির ৫০ লাখ টাকা, প্রাইভেট কার বিক্রি করে ১০ লাখ, ওই নারীর পরিচিত এক বন্ধুকে প্লট দেওয়ার জন্য এক কোটি ৫০ লাখ, মন্দিরের প্লট তাঁকে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য ৫০ লাখ এবং ঝিলমিল প্রকল্পের একটি প্লট তাঁর নামে লিখে দেওয়ার জন্য মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকাসহ মোট ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা দেবাশীষকে দেন।

দেবাশীষ ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের নভেম্বরের মধ্যে ওই নারীর কাছ থেকে এই টাকা নেন। তবে তিনি তাঁকে কোনো প্লট বুঝিয়ে দেননি। দেবাশীষ রাজউকে আসা বিত্তশালী ও অভিভাবক নেই, এমন নারীদের নিশানা করে তাঁদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক করতেন। তাঁদের সম্পত্তির নানা তথ্য সংগ্রহ করতেন ও বাসায় যেতেন। পরে রাজউকের নানা স্থানে কম দামে প্লট দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় কৌশলে বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ করতেন।

পরে প্রতারিত ব্যক্তি টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি, আইনজীবী, সাংবাদিক ও ছাত্রলীগ নেতাদের নাম ব্যবহার করে হুমকি দিতেন। দেবাশীষ ক্যাসিনোয় জুয়া খেলতেন। এ জন্য তিনি কিছুদিন আগে নেপালে যান। সেখান থেকে দেশে ফেরার পথে তাঁর কাছে অনেক ডলার থাকায় নেপালের বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন। সেখানে ২৩ দিন জেল খেটে তিনি দেশে আসেন।

রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, রাজউকের জরিপসাথি দেবাশীষ কুমার সাহার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এতে রাজউকের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হইয়েছে বিধায় তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রাজউক কর্তৃপক্ষ।