
নির্বিঘ্নে, নিরাপদে ভোট দেয়ার দাবি নিয়ে বগুড়ায় পথসভার আয়োজন করে গনতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। তবে পাঠদান চলা অবস্থায় বিদ্যালয়ের মাঠেই পথসভাটি আয়োজিত হয়। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের ভাষ্য, তাদের নির্ধারিত স্থান বাদ দিয়ে বিদ্যালয় মাঠে সভা করতে বাধ্য করেছে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কর্মসূচি অনুযায়ী তাদের পথসভার নির্ধারিত স্থান ছিল শহরের শহীদ খোকন পৌর শিশু উদ্যানে।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তবর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবি নিয়ে চারদিনের পথ সভা শুরু করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এর ধারাবাহিকতায় বগুড়ায় মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে বগুড়া শহরের সেন্ট্রাল হাইস্কুলের মাঠে এই পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এখন আমেরিকার যে ভিসা নীতি চালু করেছে, এতে বিপাকে পড়েছেন শেখ হাসিনার সুবিধাভোগী লোকজন। এই সুবিধা পায় পুলিশ, সরকারি কিছু লোকদের। তাদের সমস্যা কি? তাদের ছেলে-মেয়েরা দেশের বাইরে যেতে পারবে না। টাকা পাচার করতে পারবে না।
‘এখন শেখ হাসিনা পুলিশকে বুদ্ধি দিয়েছেন ভালো ব্যবহার করেন। মুখে মুখে ভালো ব্যবহার করেন, যেন মনে হয় পুলিশ বেশ নিরপেক্ষ। পুলিশ যদি নিরপেক্ষ হয়, আমরা তো সাতমাথায় সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সাতমাথা তো আওয়ামী লীগ নিজের করে নিয়েছেন, ওখানে আমাদের করতে দিবে না পুলিশ। পুলিশ বলল আপনারা খোকন পার্কে করেন।’
জোনায়েদ সাকি আরও করেন, খোদ জেলা এসপি সাহেব বলেছিলেন। পরে আবার জানালো ওখানে যুবলীগ থাকবে। তাদের শান্তি সমাবেশ আছে। এরপর টিটু মিলনায়তনে করতে চাইলাম, সেখানেও আমাদের দিল না। অবশেষে আমাদের দিল এমন একটি জায়গায়, যেখানে মানুষের যোগাযোগ অবস্থা ভালো না।
এরপর সভায় বক্তব্য রাখেন গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সাইফুল হক। তিনি জানান, গত ৪০ থেকে ৪৫ বছরে অসংখ্যবার এসেছি। কিন্তু এবারের মতো পরিস্থিতিতে কখনও পড়িনি। এটা একটি কাপুরুষজনিত কর্মকাণ্ড। গতকাল শিবগঞ্জে পথসভা থেকে ফেরার সময় আমাদের গাড়ি বহরে হামলা হয়। এতে ওয়ার্কাস পার্টির আইয়ুব আলী, ওসমান গনি, গাড়ি চালক শওকত আহত হয়েছেন। এরপর আমরা ফিরে আসি বগুড়া শহরে। আমাদের
বন্ধুরা আশ্রয় নিয়েছিলেন স্থানীয় হোটেলে। সেখানেও তাদের শরিফুল সুজন নামে গণসংহতির এক তরুণ নেতা, সাকিবসহ তিনজনকে অমানবিকভাবে মারধর করেছে। আপনাদের অনেকের সামনেই তাদের যেভাবে পিটিয়েছে লজ্জায় আমার মাথা হেট হয়েছে।
সাইফুল হক এ সময় দাবি জানান, পুলিশ বাহিনীকে আমি বলতে চাই কারা এ হামলা করেছে, তা আপনারা জানেন। আপনারা তাদের আইনের আওতায় আনবেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বগুড়ার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি মনিরুজ্জামান বাচ্চু। সঞ্চালনায় ছিলেন জেএসডির বগুড়ার নেতা রেজাউল বারী দিপন। এতে বক্তব্য দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা অ্যাডভোকেট সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, মাওলানা ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় আহব্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ আরও অনেকে।
এ সময় অন্য বক্তারা বলেন, বন্ধুরা এই রোড মার্চ ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার রোড মার্চ। দেশের মানুষ যেন নির্বিঘ্নে, নিরাপদে ভোট দিতে পারে তার জন্য রোডমার্চ। এখন দেশে মহা হরিলুট হচ্ছে, আমরা বিদুৎ বিল দিচ্ছি তারা সেই টাকা লুট করছে, আজ কয়লা আমদানির টাকা নাই। তাই আমরা এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবো।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা আরও বলেন, আমরা যদি একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করতে পারি তাহলে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারবো।
সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে দেখা যায় সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে গণতন্ত্র মঞ্চের লোকজন জমায়েত হতে থাকে। ওই সময় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সব ধরনের কার্যক্রম চলছিল। পথসভার নেতা-কর্মীরা ব্যানারসহ র্যা লি নিয়ে স্কুলের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করেন। তবে সমাবেশের আয়োজন করা হয় মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায়।
স্কুল মাঠে পথসভার বিষয়ে আগে থেকে কিছু জানতেন না সেন্ট্রাল হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, সকাল ১১ টার দিকে স্কুলে এসে জানতে পারি পথসভার কথা। আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। বিগত সময়ে কোনো প্রোগ্রাম থাকলে স্কুল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েই জানানো হতো।
প্রধানশিক্ষক বলেন, স্কুল চলাকালে কোনো সভা-সমাবেশ চললে পাঠদানে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাঘাত ঘটে। আবার বিদ্যালয়ের নিরাপদ পরিবেশ নিয়ে সমস্যা ঘটে। তবে বুধবার থেকে পরীক্ষা শুরু হবে, এ জন্য দুপুর দুইটার মধ্যে স্কুল ছুটি হয়ে যায়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম বলেন, এই বিষয়ে আমার জানা নেই। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) বলতে পারবেন।
জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) স্নিগ্ধ আখতার বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের পছন্দ ছিল এটি। তারা যেখানে করতে চেয়েছেন সেখানেই সভার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থান নির্ধারণে তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল।
বগুড়ায় সমাবেশ শেষে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। ৪ জুনে এই পথসভা শুরু হয়। চলবে ৭ জুন পর্যন্ত।