ঢাকা ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুহাসিনী নায়িকা নীলিমা আজিম

নিলিমা আজিম- ফাইল ছবি

নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশন জগতের সুহাসিনী নায়িকা নীলিমা আজিম বড় পর্দাতেও প্রায় তিন দশক দাপুটে অভিনয় করেছেন। কালে কালে বইয়ের পাতায় লেখা ঐতিহ্যবাহী ঘটনার নানা চরিত্রেই অভিনয় করেছেন বেশি। মুমতাজ চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকমনে সাড়া জাগিয়েছিলেন। বর্তমানে বলিপাড়া থেকে দূরে নীলিমা নিজের নাচের স্কুল নিয়েই দিব্যি থাকেন। ১৯৫৮ সালের ২ ডিসেম্বর জন্ম তাঁর। নীলিমার বাবা সাংবাদিক ছিলেন। নীলিমার আরেকটি বিশেষ পরিচয় হল বলিপাড়ার দুই অভিনেতা শাহিদ কপূর এবং ইশান খট্টরের মা তিনি।

সিংগেল মাদার হিসাবে দুই পুত্রকে একা হাতে সফল মানুষ করে গড়েছেন তিনি। ছেলেবেলায় ভারতের উত্তরাখণ্ড এবং দিল্লিতে লেখাপড়া করেন। ১৯৮৯ সালে ‘ফির ওয়াহি তালাশ’ টেলিভিশন সিরিয়ালের মাধ্যমে ছোট পর্দায় অভিষেক হয় নীলিমার। অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে নাচ, থিয়েটার ও গানের তালিম নিয়েছিলেন। তার পর মুমতাজ চরিত্রে অভিনয় করে টেলিভিশনের অভিনেত্রী হিসাবে সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন নীলিমা। অভিনয়কে ভালোবেসে বড় রুপালী পর্দার কাজ শুরু করেন। তবে তার আগে ১৯৭৯ সালে অভিনয় শুরুর আগে অভিনেতা পঙ্কজ কপূরের সঙ্গে প্রথম বিয়ে ও দুই বছরের মাথায় পুত্র শাহিদের জন্ম দেন নীলিমা। শাহিদের তিন বছর বয়েসে পঙ্কজের সঙ্গে তালাক হয় নীলিমার। ‘সিঙ্গল মাদার’ হিসাবে শাহিদকে একাই সামলে তাকে নিয়েই অভিনয় কেরিয়ারে কাজ করতে থাকেন নীলিমা। পঙ্কজের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর অভিনেতা রাজেশ খট্টরের সঙ্গে এক বছর সম্পর্কে থাকার পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন নীলিমা এবং রাজেশ । ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় বার বিয়ের সানাই বাজার বসার পাঁচ বছর পর ইশানের জন্ম দেন নীলিমা। কিন্তু এবারেও নীলিমা এবং রাজেশের সম্পর্কে ভাঙন আসে। ২০০১ সালে দ্বিতীয় তালাক হয় এই দম্পতির। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রাজেশ তাঁর সঙ্গে নীলিমার বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে বলেন, নীলিমার সঙ্গে প্রচুর মতানৈক্য হত তাঁর। ফলে রাজেশ এবং নীলিমার মধ্যে দূরত্ব কমার কোন সুযোগ হয়নি। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদে হতাশা আসে ইশানের শৈশব জীবনে। পুরনো এক সাক্ষাৎকারে এই কথাগুলো জানান অভিনেতা।

ইশান বলেন, ‘‘আমার মা খুব শক্ত মনের মানুষ। মাকে যে কী ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তা স্বচক্ষে দেখেছি। আমার জীবনে অনেক কঠিন এবং খারাপ সময় এসেছে। তবে অতীতচর্চা করতে পছন্দ করি না আমি।’’ ইশান জানান, নীলিমার সাথে ভাই শাহিদও বাবার মত আগলে রাখতেন তাঁকে। কম বয়সে তাই পরিবারের হাল ধরে ২০০৩ সালে ‘ইশক ভিশক’ হিন্দি ছবিতে প্রথম অভিনয় করতে দেখা যায় কিশোর শাহিদকে। এই ছবিতে শাহিদের মায়ের চরিত্রে ছিলেন নীলিমা। তবে কেরিয়ারের শুরুতে নানা কটুক্তি,তাচ্ছিল্যের শিকার হন শাহিদ। অভিনেতার দাবি, অনেকে ভাবতেন তিনি পঙ্কজের পুত্র বলে সহজে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে গেলেন। শাহিদ এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমার বাবা কোনও দিনও জিজ্ঞাসা করেননি যে আমি বড় হয়ে কী হতে চাই। বাবা আমাদের সঙ্গে থাকতেন না। আমিও এ বিষয়ে কিছু জানাইনি বাবাকে। নিজের দক্ষতায় অভিনয়ে নেমেছি। তারকাপুত্র হওয়ার কোনও সুবিধা নিইনি।’’ রাজেশের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর অসহায়ের মত ‘সিঙ্গল’ থাকেননি নীলিমা। বিচ্ছেদের তিন বছরের মাথায় নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে গুরুত্ব দিয়ে সাহসীভাবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী রাজ়া আলি খানকে তৃতীয় বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু এই তৃতীয় বিয়েও জুতসই হয়নি অভিনেত্রীর। ২০০৯ সালে আবারও বিচ্ছেদের সুর বাজে। তালাকের পরেও অনেক বছর টেলিভিশন এবং হিন্দি ফিল্ম জগতে কাজ করতে দেখা গিয়েছে নীলিমাকে। কিন্তু ২০১৮ সালের পর ধীরে ধীরে অভিনয় জগৎ থেকে নিজের নাচের স্কুলের গন্ডিতে নাচ করা ও নিজের শখ পূরণে ন ইজের মত থাকায় আনন্দ পেয়ে থাকেন তিনি।

সুত্রঃ আনন্দ বাজার পত্রিকা

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

সুহাসিনী নায়িকা নীলিমা আজিম

আপডেট সময় : ০১:০৮:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ জুন ২০২৩

নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশন জগতের সুহাসিনী নায়িকা নীলিমা আজিম বড় পর্দাতেও প্রায় তিন দশক দাপুটে অভিনয় করেছেন। কালে কালে বইয়ের পাতায় লেখা ঐতিহ্যবাহী ঘটনার নানা চরিত্রেই অভিনয় করেছেন বেশি। মুমতাজ চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকমনে সাড়া জাগিয়েছিলেন। বর্তমানে বলিপাড়া থেকে দূরে নীলিমা নিজের নাচের স্কুল নিয়েই দিব্যি থাকেন। ১৯৫৮ সালের ২ ডিসেম্বর জন্ম তাঁর। নীলিমার বাবা সাংবাদিক ছিলেন। নীলিমার আরেকটি বিশেষ পরিচয় হল বলিপাড়ার দুই অভিনেতা শাহিদ কপূর এবং ইশান খট্টরের মা তিনি।

সিংগেল মাদার হিসাবে দুই পুত্রকে একা হাতে সফল মানুষ করে গড়েছেন তিনি। ছেলেবেলায় ভারতের উত্তরাখণ্ড এবং দিল্লিতে লেখাপড়া করেন। ১৯৮৯ সালে ‘ফির ওয়াহি তালাশ’ টেলিভিশন সিরিয়ালের মাধ্যমে ছোট পর্দায় অভিষেক হয় নীলিমার। অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে নাচ, থিয়েটার ও গানের তালিম নিয়েছিলেন। তার পর মুমতাজ চরিত্রে অভিনয় করে টেলিভিশনের অভিনেত্রী হিসাবে সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন নীলিমা। অভিনয়কে ভালোবেসে বড় রুপালী পর্দার কাজ শুরু করেন। তবে তার আগে ১৯৭৯ সালে অভিনয় শুরুর আগে অভিনেতা পঙ্কজ কপূরের সঙ্গে প্রথম বিয়ে ও দুই বছরের মাথায় পুত্র শাহিদের জন্ম দেন নীলিমা। শাহিদের তিন বছর বয়েসে পঙ্কজের সঙ্গে তালাক হয় নীলিমার। ‘সিঙ্গল মাদার’ হিসাবে শাহিদকে একাই সামলে তাকে নিয়েই অভিনয় কেরিয়ারে কাজ করতে থাকেন নীলিমা। পঙ্কজের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর অভিনেতা রাজেশ খট্টরের সঙ্গে এক বছর সম্পর্কে থাকার পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন নীলিমা এবং রাজেশ । ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় বার বিয়ের সানাই বাজার বসার পাঁচ বছর পর ইশানের জন্ম দেন নীলিমা। কিন্তু এবারেও নীলিমা এবং রাজেশের সম্পর্কে ভাঙন আসে। ২০০১ সালে দ্বিতীয় তালাক হয় এই দম্পতির। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রাজেশ তাঁর সঙ্গে নীলিমার বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে বলেন, নীলিমার সঙ্গে প্রচুর মতানৈক্য হত তাঁর। ফলে রাজেশ এবং নীলিমার মধ্যে দূরত্ব কমার কোন সুযোগ হয়নি। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদে হতাশা আসে ইশানের শৈশব জীবনে। পুরনো এক সাক্ষাৎকারে এই কথাগুলো জানান অভিনেতা।

ইশান বলেন, ‘‘আমার মা খুব শক্ত মনের মানুষ। মাকে যে কী ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তা স্বচক্ষে দেখেছি। আমার জীবনে অনেক কঠিন এবং খারাপ সময় এসেছে। তবে অতীতচর্চা করতে পছন্দ করি না আমি।’’ ইশান জানান, নীলিমার সাথে ভাই শাহিদও বাবার মত আগলে রাখতেন তাঁকে। কম বয়সে তাই পরিবারের হাল ধরে ২০০৩ সালে ‘ইশক ভিশক’ হিন্দি ছবিতে প্রথম অভিনয় করতে দেখা যায় কিশোর শাহিদকে। এই ছবিতে শাহিদের মায়ের চরিত্রে ছিলেন নীলিমা। তবে কেরিয়ারের শুরুতে নানা কটুক্তি,তাচ্ছিল্যের শিকার হন শাহিদ। অভিনেতার দাবি, অনেকে ভাবতেন তিনি পঙ্কজের পুত্র বলে সহজে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে গেলেন। শাহিদ এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমার বাবা কোনও দিনও জিজ্ঞাসা করেননি যে আমি বড় হয়ে কী হতে চাই। বাবা আমাদের সঙ্গে থাকতেন না। আমিও এ বিষয়ে কিছু জানাইনি বাবাকে। নিজের দক্ষতায় অভিনয়ে নেমেছি। তারকাপুত্র হওয়ার কোনও সুবিধা নিইনি।’’ রাজেশের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর অসহায়ের মত ‘সিঙ্গল’ থাকেননি নীলিমা। বিচ্ছেদের তিন বছরের মাথায় নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে গুরুত্ব দিয়ে সাহসীভাবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী রাজ়া আলি খানকে তৃতীয় বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু এই তৃতীয় বিয়েও জুতসই হয়নি অভিনেত্রীর। ২০০৯ সালে আবারও বিচ্ছেদের সুর বাজে। তালাকের পরেও অনেক বছর টেলিভিশন এবং হিন্দি ফিল্ম জগতে কাজ করতে দেখা গিয়েছে নীলিমাকে। কিন্তু ২০১৮ সালের পর ধীরে ধীরে অভিনয় জগৎ থেকে নিজের নাচের স্কুলের গন্ডিতে নাচ করা ও নিজের শখ পূরণে ন ইজের মত থাকায় আনন্দ পেয়ে থাকেন তিনি।

সুত্রঃ আনন্দ বাজার পত্রিকা