বগুড়ায় বিএনপির তারুণের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে আজ। দলটি প্রস্তুতি সভাও করেছে দলটি।জেলার নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে শহরব্যাপী লিফলেট বিতরণ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা । রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের শহরগুলোতেও প্রস্তুতি সভা ও লিফলেট বিতরণ হয়েছে।
রাজধানী ঢাকাসহ ছয় বড় শহরে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি। আন্দোলনে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলটির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন-জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালন করবে। ১০ জুন চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়।
পর্যায়ক্রমে বগুড়া, খুলনা, বরিশাল, সিলেট এবং সবশেষে ঢাকায় পালন করবে এ কর্মসূচি। ‘দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশ’ শিরোনামে এতে নতুন ভোটার টার্গেট করে তরুণদের ব্যাপক জমায়েতের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব। ইতোমধ্যে নেতাদের দায়িত্বও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে অনেকেই বলেন, বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে ভিন্নমাত্রার কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল যৌথভাবে তরুণদের নিয়ে বিভাগীয় বা বড় জেলা শহরে সমাবেশ করতে পারে। বিগত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা ভোটার হয়েছেন, তারা ভোট দিতে পারেননি। নতুন ভোটারদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে হতে পারে এসব সমাবেশ। এতে তরুণরা উৎসাহিত হবে। ‘তারুণ্যের সমাবেশের’ পাশাপাশি বিএনপি ও সমমনা দলগুলোও নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। স্থায়ী কমিটির এমন সিদ্ধান্তের পর তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকমান্ডের নির্দেশ পেয়ে কর্মসূচির দিনক্ষণ চূড়ান্তে দফায় দফায় বৈঠক করেন তারা। কর্মসূচির খসড়া তৈরি করে হাইকমান্ডের কাছে পাঠানো হয়। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে কর্মসূচির দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের পর ১৭ জুন বগুড়ায় হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে আজ ১৯ শে জুন। এরপর ৭ জুলাই খুলনা, ১৫ জুলাই বরিশাল, ২২ জুলাই সিলেট এবং ২৯ জুলাই ঢাকায় সমাবেশের কথা রয়েছে। প্রতিটি সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জানতে চাইলে বগুড়ায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন আহ্বায়ক আসিফ মাহমুদ বাংলাপ্রেসকে বলেন, তরুণ ভোটার, বিশেষ করে গত ১৫ বছরে যারা ভোটার হয়েছেন, অনেকেরই বয়স এখন ৩০ থেকে ৩৫ হয়ে গেছে। কিন্তু তারা স্বাধীনভাবে একবারও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থায় চরম ধস নেমেছে। তরুণরা ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে; কিন্তু এখনো সেই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারছি না। সেই জায়গায় তরুণদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, তাদের জেগে উঠতে হবে। তরুণদের সমন্বিত আন্দোলনের মাধ্যমে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বগুড়া বিএনপির রাজনীতির আতুড়ঘর সেখানে আমরা দলে যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলনের অংশ হিসাবে সমাবেশ সফল করতে কাজ করছি। আমাদের নেতা কর্মীরা সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে সমাবেশ সফল করবে। সাধারণ মানুষের মাঝে প্রচারপত্র বিলি, দলের চেয়ারপার্সন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের মেসেজ সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুনে সাজ সাজ রব। গণ মানুষ আমাদের সাথে আছে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তি, আইনের শাসন, শিক্ষা-চিকিৎসা-বাসস্থানের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা, ভঙ্গুর রাষ্ট্র কাঠামোকে মেরামত করে একটি আধুনিক স্বনির্ভর বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তরুণদের সংগঠিত করার লক্ষ্যেই এ সমাবেশ। তরুণদের নেতৃত্বে আগামী বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যেই এ সমাবেশ।
সূত্রমতে, তিন সংগঠনের তারুণ্যের সমাবেশগুলোয় গত বছরের বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আবহ তৈরি করতে চান নেতাকর্মীরা। এতে তরুণদের ব্যাপক উপস্থিতি বাড়াতে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচি সফল করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করা হচ্ছে। সারা দেশের সব ইউনিট নেতাদের সঙ্গেও ধারাবাহিক বৈঠক করছেন তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
নেতারা মনে করছেন, ১৫ বছর ধরে তরুণরা নানাভাবে অবহেলিত। উচ্চশিক্ষার পরও লাখ লাখ তরুণ বেকার। ভোটার হওয়া সত্ত্বেও তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। এসব কিছুই তরুণদের আকৃষ্ট করতে বড় ভূমিকা রাখবে।
বগুড়া সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে বিকাল ৩ টায় সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। সেই প্রস্তুতি ইতোমধ্যে দলটির পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে। প্রশাসনের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে রাত থেকে। সাধারণ গণ পরিবহন মধ্যরাত থেকে সীমিত দেখা গেছে মূল শহরে। পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে মূল শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা বীরশ্রেষ্ঠ চত্ত্বরের চারপাশের ভাসমান দোকানপাট বন্ধ দেখা যায়। অনেক দোকানী, রিক্সাচালক জানান পুলিশ তাদের দ্রূত চলে যেতে বলেছে৷