সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী আশিকুজ্জামান বায়তুল মোকাররম মসজিদের কার্পেটের দোকানে বিদেশ থেকে আমদানি করা কার্পেট ও জায়নামাজ সরবরাহ করে থাকেন। গত ১৯ জুন তার স্ত্রী সন্তান প্রসবজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ২০ জুন সকালে আশিকুজ্জামানের উত্তরার বাসায় দুদুকের মনোগ্রাম সম্বলিত খাকি রঙের খামে কার্পেটের ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণের চোরাচালান এবং মানি লন্ডারিং করছেন মর্মে একটি ভয়ানক অভিযোগপত্র নিয়ে একজন দুদক অফিসারের আর্বিভাব ঘটে। দুদকের সেই চিঠি অনুসারে বিভিন্ন অভিযোগের পাশাপাশি লেখা থাকে শূন্য থেকে সে আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। তাকে দুদকের দপ্তরে ধরে আনা হবে ও জিজ্ঞাসাবাদ করলে সকল প্রমাণ পাওয়া যাবে। সুতরাং প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। কারণ দর্শানোসহ ব্যক্তিগত শুনানির জন্য ১০ই জুলাই তারিখ নির্ধারিত হয়। চিঠি নিয়ে আসা দুদক কর্মকর্তা হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আশিকুজ্জামানকে কথা হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলালে ফোনের অপর প্রান্তের দুদকের সেই কর্মকর্তা মোবাইলে কথা বলা যাবেনা তাই বিস্তারিত জানার জন্য তাকে দুদক অফিসে সশরীরে হাজিরা দিতে বলেন। তখন দুদকের সেই অফিসার আশিকুজ্জামানকে রক্ষা করার কপট অভিনয় করে বলে মোবাইল বন্ধ করে দিয়ে যেন তিনি কোথাও গা ঢাকা দেন নাহলে সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনএসআই, ডিবি পুলিশ এবং দুদক তাকে খুঁজে পেলে ধরে এনে কঠিন শাস্তি দিবে। তার সম্পত্তি ক্রোক হবে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে, প্রিন্টেড ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে সবার সামনে আনলে মানসম্মান কিছুই থাকবেনা ইত্যাদি ভয় দেখানো হয়।
ভীতসন্ত্রস্ত্র আশিকুজ্জামানকে দফায় দফায় ফোন দিতে থাকে হোয়াটসঅ্যাপে।
এক পর্যায়ে আশিকুজ্জামানকে মতিঝিলের হীরাঝিল হোটেলের দ্বিতীয় তলায় এসে দুই কোটি টাকা দিয়ে সমঝোতা করে সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্তির আশ্বাস দেওয়া হয়। তারপর তারা এক কোটি টাকায় রাজি হয়। গতকাল শুক্রবার ২৩ জুন জুম্মার আগে ২০ লক্ষ টাকা ও বাকি টাকা আগামী রোববার ব্যাংকিং সময়ে দিবে বলে একটি মিটমাট হয়। আশিকুজ্জামানের কাছে পুর বিষয়টি ভীতিকর, সন্দেহজনক ও অসহনীয় মনে হলে তিনি বিষয়টি গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগককে জানান। অতপর গোয়েন্দারা দুদকের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম এর নেতৃত্বে হোটেল হীরাঝিল ঘিরে গোপনে অবস্থান নেয়। আশিকুজ্জামান চারটি মিষ্টির প্যাকেটে তার সাইন করা দেড় লাখ টাকা প্যাকেট করে হীরাঝিলে যান। মিষ্টির প্যাকেটে সাইন করা টাকা নেওয়ার সময় আশেপাশে থাকা ডিবি পুলিশ তাদেরকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। ডিবি লালবাগ বিভাগের এডিসি রাকিবের নেতৃত্বে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- গৌতম ভট্টাচার্য (৪২), হাবিবুর রহমান (৪২), পরিতোষ মন্ডল (৬৩) ও মোঃ এসকেন আলী খান (৫৭)। তাদের কাছ থেকে মিষ্টির ৪টি প্যাকেট, নগদ দেড় লক্ষ টাকা, ৪টি মোবাইল ফোন, দুদকের মনোগ্রাম সম্বলিত খাকি রঙের ১টি খাম ও দুদকের একটি নোটিশ জব্দ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গৌতম ভট্টাচার্য দুদকের ডিজি মানি লন্ডারিং-এর পিএ হিসেবে কর্মরত, বাড়ি মৌলভীবাজার। এসকেন আলী খান চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য, বাড়ি গোপালগঞ্জ। অপর দুইজন পেশাগতভাবে দালাল ও প্রতারক এবং গোপালগঞ্জের বাসিন্দা।
গৌতম ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন যাবত দুদকের বিভিন্ন মহাপরিচালকদের পিএ হিসেবে কাজ করে আসছে। দুদকের ডিজি (তদন্ত), ডিজি (এডমিন), ডিজি (প্রসিকিউশন), ডিজি (মানি লন্ডারিং) এর অফিসের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (পিএ) হিসেবে কাজ করেছে গৌতম। গৌতম ভট্টাচার্য দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা থেকেই জানে দুর্নীতিতে জড়িয়ে কোন মানুষকে কি লিখে নোটিশ পাঠাতে হয়, কীভাবে তাদের কাছ থেকে আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক জবানবন্দি নেয় এবং কীভাবে কোন অভিযোগ গঠন করা হয়। এই অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সে তার দুষ্কর্মের সহযোগীদেরকে দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি এবং চাকরিজীবীকে বেছে বেছে সনাক্ত করে। এরপর তাদের ব্যক্তিগত সব তথ্য সংগ্রহ করে দুদকের চিঠির খাম ও প্যাড/ফরমেট এর অপব্যবহার করে অভিযোগের মিথ্যা নোটিশ পাঠাত। পরবর্তীতে কখনো মোবাইলে-হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলে, কখনো শিল্পকলা একাডেমির ভেতরে বসে, কখনো আশেপাশের বিভিন্ন হোটেলে ভিক্টিমের টাকায় দামী খাবার খেতে খেতে তাদেরকে অভিযোগের দায় হতে মুক্তি/মিট্মাটের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এই চক্রের সাথে দুদুকের দায়িত্বশীল আরও কেউ জড়িত আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখার জন্য আসামিদের জিজ্ঞাসা করা হবে।