
এক সময় সবার ঘরে কিন্তু রেফ্রিজারেটর বা ডীপ ফ্রীজ ছিল না। তবুও আমাদের মা খালারা অনেক গ্রামীন পদ্ধতিতে কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করে মজার মজার মাংসের পদ তৈরী করতেন। আসুন ফিরে দেখি কিভাবে সেটা সম্ভব হয়েছিল।
চর্বিতে ডুবিয়ে সংরক্ষণঃ
মাংস মাঝারি সাইজে টুকরো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। প্রথম বারেই মাংসের পরিমাণের সাথে মিলিয়ে বড় পাত্র নিয়ে বেশি পরিমাণে চর্বি বিছিয়ে তাতে মাংসগুলো এমন ভাবে সাজিয়ে রাখুন তাপ লাগলে মাংস যেন চর্বির অন্তত আধা ইঞ্চি নিচে ডুবে থাকে।। এলাচ, দারুচিনি তেজপাতা, লবণ , গরম মশলা ও মাংসের অন্য সব মশলাও দিলে ভাল তবে তা অল্প দিন। বেশি মসলা দিলে রান্না করা মাংসের মতো হয়ে যেতে পারে। সব চর্বি গলে যাওয়া অব্দি মাংসে পানি শুকিয়ে চুলায় আঁচ বাড়িয়ে জ্বাল দিন। তারপর নামিয়ে ঢাকনা না দিয়ে সব ভাপ বের করে ঠাণ্ডা করে চর্বিত্র মাংস জমিয়ে চূলা থেকে দূরে ঠান্ডা জায়গায় ঢেকে রেখে দিন। প্রথম সপ্তাহে ২ বার এবং পরে সপ্তাহে অন্তত ১ বার মাংস জ্বাল দিতে হবে। এ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে এক সপ্তাহের বেশি লবণ থাকলে এলোমনিয়ামের হাঁড়ি ছিদ্র হয়ে যায় তাই লোহা বা দস্তার মজবুত হাঁড়ি বা কড়াই নেবেন।
রোদে শুকিয়ে মাংসের শুটকিঃ
রোদে শুকিয়েও মাংস সংরক্ষণ করার পদ্ধতি অনেক প্রাচীন এবং খেতে সবচেয়ে সুস্বাদু। প্রথমেই মাংসের সব চর্বি সরিয়ে পাতলা ও লম্বা স্লাইসে মাংস কাটতে হবে। সামান্য হলুদ ও লবণ দিয়ে অল্প জ্বাল দিন। বেশি সেদ্ধ দেয়া যাবেনা। ভালোমতো পানি শুকিয়ে গিয়ে ঠাণ্ডা হলে বাজার থেকে জিআই তার বা গুণার ভেতরে লম্বা মালার মতো করে গেঁথে ৬-৭ দিন টানা কড়া রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এই মাংসের মালা যেন ছায়াতে বা বৃষ্টির ছাট পেলে ফাঙ্গাস ধরে যায় এবং শুকানোর সময় পাহারা দিতে হয় যেন ধুলোবালি, কাক বা পাখি বা বেড়াল আক্রমণ না করে। মাংস একদম টেনে শুকিয়ে যাবার পর খটখটে শুকনো কাঁচের জারে খবরের কাগজ অথবা ব্লাটিং পেপারে মুড়িয়ে টিনজাত করুন।
মাঝে মাঝে জার থেকে বের করে মাংস রোদে দিলে ৬ মাস পর্যন্ত ভালো ভাবে রেখে খাওয়া যায়। পাতলা স্লাইসে মাংস শুকালে সরাসরি ভেজে বা রান্না করে খেতে পারবেন। আর একটু মোটা টুকরা হলে মাংস রান্নার আগে ২-৩ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে রান্না করলে কিছুটা নরম থাকবে।:
রান্না-জ্বালে সংরক্ষণঃ
স্বাভাবিক নিয়মে মাংস সংরক্ষণ করতে চাইলে মশলা কম এবং তেল বেশি দিয়ে প্রতিদিন কষিয়ে কষিয়ে ১ সপ্তাহের মতো রেখে খেতে পারবেন। এটাও অনেক মজা হয়। এক্ষেত্রে রান্না করা মাংসের হাড়ি ফ্যানের নিচে ঠাণ্ডা জায়গায় রাখতে হবে। জ্বাল দেয়ার সময় খুব বেশি নাড়াচাড়া করা যাবে না এবং তলানিতেও যেন না লেগে যায় তাই মাংসের টুকরাগুলো একটু বড় রাখতে হবে নাহলে ভেঙে যাবে।
মাংসে শুধু তেল থাকবে কোন পানি রাখা যাবেনা।
লবণ ও লেবুর রস দিয়ে সংরক্ষণঃ
লবণ ও লেবু রস মাখিয়ে মাংসের বড় বড় টুকরা ও কুচি মাংস কিমা করে আপনি তা সংরক্ষণ করতে পারেন। এতা বেশিক্ষণ রাখা যায়না এবং নষ্ট হবার সম্ভাবনাও থাকে। অভিজ্ঞতা থাকলে এভাবে সংরক্ষণ করা যায়।
মাংস ভেজে সংরক্ষণঃ
মাংসে লবণ আর হলুদ মিশিয়ে ডুবো তেলে ভেজে সেই তেলে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করতে পারেন। এতে মাংস বহুদিন ভালো থাকবে।