২০২২ সালের (৮ জুলাই) সকালে রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন দেশবরেণ্য জনপ্রিয় অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদন। আজ তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। দুই বছর ক্যানসারের সাথে লড়াই করেন এই অভিনেত্রী নিতে হয় ২৮টি কেমোথেরাপি । দুই দশক আগে মারা যান অভিনয়শিল্পী শর্মিলী আহমেদের স্বামী পরিচালক রাকিব উদ্দিন আহমেদ। তাঁর নির্মিত ‘পলাতক’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শর্মিলী আহমেদ। বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল রাকিব উদ্দিন আহমেদকে। একই কবরে ঘুমিয়ে আছেন শর্মিলী আহমেদ।
শর্মিলী আহমেদের প্রকৃত নাম মাজেদা মল্লিক। ১৯৪৭ সালের ৮ মে তার জন্ম। মুর্শিদাবাদের বেলুর চাক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী পিএন গার্লস হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাস করেন। এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী অভিনয় শুরু করেন মাত্র চার বছর বয়স থেকে। রাজশাহী বেতারের শিল্পী ছিলেন তিনি। ষাটের দশকে চলচ্চিত্রাঙ্গনে নাম লেখান শর্মিলী। এর মধ্যে অবশ্য প্রথম চলচ্চিত্র ‘ঠিকানা’ (উর্দু ভাষায় নির্মিত) পর্দায় প্রকাশ পায়নি। তবে সুভাষ দত্তের ‘আলিঙ্গন’, ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ এবং ‘আবির্ভাব’ চলচ্চিত্র দিয়ে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন।
স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে আরও কিছু উর্দু সিনেমাতেও তিনি অভিনয় করেন। স্বাধীনতার পর ‘রূপালী সৈকতে’, ‘আগুন’, ‘দহন’-এর মতো জনপ্রিয় সব চলচ্চিত্রে ছিল তার সরব উপস্থিতি।
এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ নাটক ও ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন শর্মিলী আহমেদ। অভিনয়জীবনে মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রের বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সবার মন জয় করেছেন সাবলীল অভিনয় দিয়ে। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘দম্পতি’-তে অভিনয় করেছেন।
১৯৭৬ সালে মোহাম্মদ মহসিন পরিচালিত ‘আগুন’ সিনেমায় মায়ের ভূমিকায় প্রথম অভিনয় করেন। সেই থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নিরলসভাবে মমতাময়ী মা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বাস্তবেও মায়ের মতোই আগলে রেখে অভিনয় ও সংসার—দুটিই সামলেছেন মমতাময়ী এই মা। সংসারে কী রান্না হবে, কে কী খাবেন—এসব বুঝিয়ে দিয়েই প্রতিদিন ছুটতেন শুটিং সেটে। সন্তানদের মানুষ করতে অভিনয়টা একটু কমিয়ে দিয়েছিলেন শর্মিলী।
অভিনয়জীবনে মায়ের চরিত্রে এত বেশি অভিনয় করেছেন যে, বিনোদন অঙ্গনে তিনি সবার কাছে ‘মা’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। সবাই তাকে ‘শর্মিলী মা’ বলেই ডাকতেন।