জনতার স্রোত থামানো যাবে না : মির্জা ফখরুল

  • প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:১৩:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ মে ২০২৩
  • ১৭২৫ বার পড়া হয়েছে

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হতে হবে এবং বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। বিদেশ সফরে কোনো লাভ হবে না। সরকারের সময় শেষ। আজরাইল প্রস্তুত।

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীতে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অধীনস্থ আদালত ও সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতিসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীর শ্যামলী মাঠে পূর্বঘোষিত এই সমাবেশ হয়।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার দেশে-বিদেশে সর্বত্র বিশ্বস্ততা হারিয়েছে। তাই আপনারা অবৈধ সরকারের নির্দেশ মানতে গিয়ে এমন কাজ করবেন না, যাতে চিহ্নিত হয়ে যান।

তিনি বলেন, করোনাকে ঠেকানো যাবে, মোখাকে ঠেকানো যাবে কিন্তু জনতার উত্তাল স্রোতকে ঠেকানো যাবে না। স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনাকে ফিরিয়ে এনে দেশকে মুক্ত ও মানুষকে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হলে যুদ্ধের বিকল্প নেই। আসুন সেই শপথ নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি ঝড়ের বেগে আন্দোলন গড়ে তুলি। আমাদের ফয়সালা হবে রাজপথে। টেইক ব্যাক বাংলাদেশ।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষ আজকে ভালো নেই। নিত্যপণ্যের মূল্য লাগামহীন। বাসা-বাড়িতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস নেই। মা-বোনেরা রান্না করতে পারে না। পানিও নেই। কিন্তু সবকিছুর দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গ্রামের কৃষকরা ফসলের ক্ষেতে পানি দিতে পারে না। সারের যে দাম তাও দিতে পারে না। ধান-পাটের দাম নেই। বাজারে গেলে বোঝা যায় জিনিসের কী দাম? সরকার চালের দাম কত দিবে বলেছিল? আজকে চালের দাম কত? তেলের দাম, লবণের দাম, চিনির দাম, ডিমের দাম, পেঁয়াজ, আদা-রসুনের দাম কত? যেসব জিনিস নিয়ে বেঁচে থাকি এমন কোনো জিনিস নেই যার দাম বাড়েনি?

তিনি বলেন, দেশের এ অবস্থার মধ্যেও আমাদের ক্ষমতাসীন বন্ধুরা যারা এসি গাড়িতে-বাড়িতে বসে পোলাও-কোরমা বিরানি খাচ্ছেন তারা বলছেন, দেশের সব ঠিক আছে। তাদের বলব- চার দেয়াল থেকে বেরিয়ে মানুষের কাছে আসুন। তাদের মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। আসলে যারা মানুষের মতকে তোয়াক্কা করেন না তারা এসবে বিশ্বাস করে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় বন্দি করেছে সরকার। মিথ্যা মামলায় আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিদেশে যেতে বাধ্য করেছে। ৩৫ লক্ষাধিক মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। আজকে মানুষ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে।

তিনি বলেন, সাংবাদিকেরা এখন ঠিকমতো লিখতেও বলতে পারে না। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য সবই ধ্বংস করেছে। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স দিতে দিতে নিঃস্ব হয়ে গেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের সময় শেষ। তারা যতই চিল্লাচিল্লি করুক, বিদেশে সফর করুক। তাদের সময় শেষ। আজরাইল প্রস্তুত। এখনো সময় আছে জনগণকে মুক্তি দেন, জনগণের দাবি মেনে নিন। সাধারণ মানুষের ভাতের নিশ্চয়তা চাই। আজকে সরকার টিকে থাকার জন্য শেষ কামড় দিচ্ছে। তারা নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিচ্ছে। সমাবেশে গুলি করছে। আমরা কোন রাষ্ট্রে বাস করছি?

বিএনপির মহাসচিব বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। দেশের মানুষ এই ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না এবং যেতে দিবে না। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলছি- সংঘাত চাই না। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছি। ২০১৮ সালে আমাদের ডেকে নিয়ে বলা হলো- গ্রেপ্তার হয়রানি করবে না। কিন্তু অসংখ্য গায়েবি মামলা করা হলো। নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করা হলো। এভাবে তারা আমাদের কোনো কথা রাখেনি। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

গত শনিবার ঢাকায় এক সমাবেশে ৪ পর্বের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মো. আমিনুল হকের পরিচালনায় জনসমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মো. আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, কামরুজ্জামান রতন, রকিবুল ইসলাম বকুল, নিলোফার চৌধুরী মনি, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, রফিক সিকদার, মহানগর উত্তর বিএনপির বজলুল বাসিত আঞ্জু, যুবদলের মামুন হাসান, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষকদলের হাসান জাফির তুহিন, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ওলামা দলের শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জনতার স্রোত থামানো যাবে না : মির্জা ফখরুল

আপডেট সময় : ০৯:১৩:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ মে ২০২৩

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হতে হবে এবং বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। বিদেশ সফরে কোনো লাভ হবে না। সরকারের সময় শেষ। আজরাইল প্রস্তুত।

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীতে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অধীনস্থ আদালত ও সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতিসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীর শ্যামলী মাঠে পূর্বঘোষিত এই সমাবেশ হয়।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার দেশে-বিদেশে সর্বত্র বিশ্বস্ততা হারিয়েছে। তাই আপনারা অবৈধ সরকারের নির্দেশ মানতে গিয়ে এমন কাজ করবেন না, যাতে চিহ্নিত হয়ে যান।

তিনি বলেন, করোনাকে ঠেকানো যাবে, মোখাকে ঠেকানো যাবে কিন্তু জনতার উত্তাল স্রোতকে ঠেকানো যাবে না। স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনাকে ফিরিয়ে এনে দেশকে মুক্ত ও মানুষকে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হলে যুদ্ধের বিকল্প নেই। আসুন সেই শপথ নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি ঝড়ের বেগে আন্দোলন গড়ে তুলি। আমাদের ফয়সালা হবে রাজপথে। টেইক ব্যাক বাংলাদেশ।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষ আজকে ভালো নেই। নিত্যপণ্যের মূল্য লাগামহীন। বাসা-বাড়িতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস নেই। মা-বোনেরা রান্না করতে পারে না। পানিও নেই। কিন্তু সবকিছুর দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গ্রামের কৃষকরা ফসলের ক্ষেতে পানি দিতে পারে না। সারের যে দাম তাও দিতে পারে না। ধান-পাটের দাম নেই। বাজারে গেলে বোঝা যায় জিনিসের কী দাম? সরকার চালের দাম কত দিবে বলেছিল? আজকে চালের দাম কত? তেলের দাম, লবণের দাম, চিনির দাম, ডিমের দাম, পেঁয়াজ, আদা-রসুনের দাম কত? যেসব জিনিস নিয়ে বেঁচে থাকি এমন কোনো জিনিস নেই যার দাম বাড়েনি?

তিনি বলেন, দেশের এ অবস্থার মধ্যেও আমাদের ক্ষমতাসীন বন্ধুরা যারা এসি গাড়িতে-বাড়িতে বসে পোলাও-কোরমা বিরানি খাচ্ছেন তারা বলছেন, দেশের সব ঠিক আছে। তাদের বলব- চার দেয়াল থেকে বেরিয়ে মানুষের কাছে আসুন। তাদের মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। আসলে যারা মানুষের মতকে তোয়াক্কা করেন না তারা এসবে বিশ্বাস করে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় বন্দি করেছে সরকার। মিথ্যা মামলায় আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিদেশে যেতে বাধ্য করেছে। ৩৫ লক্ষাধিক মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। আজকে মানুষ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে।

তিনি বলেন, সাংবাদিকেরা এখন ঠিকমতো লিখতেও বলতে পারে না। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য সবই ধ্বংস করেছে। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স দিতে দিতে নিঃস্ব হয়ে গেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের সময় শেষ। তারা যতই চিল্লাচিল্লি করুক, বিদেশে সফর করুক। তাদের সময় শেষ। আজরাইল প্রস্তুত। এখনো সময় আছে জনগণকে মুক্তি দেন, জনগণের দাবি মেনে নিন। সাধারণ মানুষের ভাতের নিশ্চয়তা চাই। আজকে সরকার টিকে থাকার জন্য শেষ কামড় দিচ্ছে। তারা নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিচ্ছে। সমাবেশে গুলি করছে। আমরা কোন রাষ্ট্রে বাস করছি?

বিএনপির মহাসচিব বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। দেশের মানুষ এই ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না এবং যেতে দিবে না। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলছি- সংঘাত চাই না। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছি। ২০১৮ সালে আমাদের ডেকে নিয়ে বলা হলো- গ্রেপ্তার হয়রানি করবে না। কিন্তু অসংখ্য গায়েবি মামলা করা হলো। নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করা হলো। এভাবে তারা আমাদের কোনো কথা রাখেনি। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

গত শনিবার ঢাকায় এক সমাবেশে ৪ পর্বের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মো. আমিনুল হকের পরিচালনায় জনসমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মো. আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, কামরুজ্জামান রতন, রকিবুল ইসলাম বকুল, নিলোফার চৌধুরী মনি, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, রফিক সিকদার, মহানগর উত্তর বিএনপির বজলুল বাসিত আঞ্জু, যুবদলের মামুন হাসান, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষকদলের হাসান জাফির তুহিন, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ওলামা দলের শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।