বগুড়ার বুক চিরে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর ওপর ফতেহ আলী দৃষ্টিনন্দন সেতু পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। সোমবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বগুড়া-৬ সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু এ কাজের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধন শেষে তিনি বলেন, পূর্ব বগুড়ার লাখো মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা ছিল দৃষ্টিনন্দন ফতেহ আলী সেতু নির্মাণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি বাস্তবায়ন করেছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশকে মডেল হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় বগুড়াও পিছিয়ে নেই।
তিনি আরো বলেন, আগামী ২৬ মে বগুড়ায় আইসিটি মন্ত্রী আসবেন। তিনি আজিজুল হক কলেজে আইসিটি ইন্সটিটিউট ও বগুড়ায় হাইটেক পার্ক নির্মানের জায়গা পরিদর্শন করবেন। আমরা আশা করি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বগুড়ার দুই হাজার ছেলেমেয়ে প্রশিক্ষণ পেয়ে দেশে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বগুড়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বগুড়া সিরাজগঞ্জ রেললাইন নির্মাণ, ইপিজেড নির্মাণ, ২য় বিসিক শিল্প নগরী, শাহ ফতেহ আলী সেতু নির্মাণ, শহীদ মিনার তৈরির জন্য ৫০ লাখ টাকা, ও বগুড়া প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণের জন্য ৫০ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেছেন। এছাড়াও বগুড়া পৌর সভার জন্য ১৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তার কথা তিনি বলেছেন।
জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের সূত্র জানায়, ফতেহ আলী সেতু দিয়ে পূর্ব বগুড়ার তিন উপজেলার মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে। এই সেতুকে পূর্ব বগুড়ার প্রবেশ দ্বারও বলা হয়। ২০১৮ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার প্রায় ৫ বছর পর এর পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ৫৩ বছর আগে নির্মিত এই সেতু পুনঃনির্মাণ কাজ শুরুর আগে গত ১৬ মে স্থানীয় সংসদ সদস্য নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করেন।
৬৯ মিটার দৈর্ঘ্য আর ১২ দশমিক ৩ মিটার চওড়া এই সেতুর দুপাশে আড়াই মিটার করে ফুটপাত থাকবে। দৃষ্টিনন্দন এবং আধুনিক স্থাপত্যের ছোঁয়া রয়েছে এই সেতুর নকশায়। এ সেতুটি পুনঃনির্মাণ হলে বগুড়া শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। ফতেহ আলী সেতুটি বগুড়াবাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন সেতু। বগুড়ার তিনটি উপজেলার মানুষ এই সেতু দিয়ে পারাপার হবে। ফলে ঐ তিন উপজেলার কৃষি পণ্য সহজে বাজারজাত করা সম্ভব হবে।
বগুড়া সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জানান প্রাথমিকভাবে এই সেতু নির্মাণে ২২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও এই ব্যয় এখন কমে ১৯ কোটি ৮৩ লাখে নেমেছে। ২০২১ সালে সেতুটি নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। পরে সেতুটির নকশা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। ২০২২ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সেতুটির নকশা ও অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। এক বছরের মধ্যে সেতুটির পুনঃনির্মান কাজ শেষ করা হবে। সড়ক বিভাগ থেকে সেতুটির নির্মানকারী প্রতিষ্ঠানকে সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বগুড়া সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রদীপ কুমার রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনু, দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নাসরিন রহমান সীমা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান সফিক, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ওবায়দুল হাসান ববি, সদস্য তৌফিকুর রহমান ভান্ডারী বাপ্পি, এ্যাডভোকেট নরেশ মুখার্জী, এ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম নাফরু, জহুরুল হক বুলবুল, গৌতম কুমার দাস। আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুস সালাম, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আলমগীর বাদশা, সাধারণ সম্পাদক মো. মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, জেলা যুবলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহ-সভাপতি মাইসুল তোফায়েল কোয়েল, শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক উদয় কুমার বর্মন, জেলা তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেকুজ্জামান রাজন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা, সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয়।
১৯৬২ সালে করতোয়া নদীর ওপর ৬৮ মিটার দীর্ঘ ফতেহ আলী সেতু নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সে সময় সেতুটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছিল ২০ লাখ টাকা। নির্মাণের নয় বছর পর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেতুটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাধীনতার পর সেটি মেরামত করে জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়।